“আইকম বাইকম তাড়াতাড়ি, যদু মাষ্টার শ্বশুরবাড়ি,
রেল কাম ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম !”
Indian Train in the year of 1911 |
সেই ছোটবেলায় শেখা ছড়া এখনো মনে আছে, অথচ রিসেন্টলি পড়া কত কি ভুলে গেছি, যাচ্ছিও। শর্ট-টাইম মেমরি মনে হচ্ছে আর সহজে জিনিসপত্রকে লং-টাইম মেমরিতে ট্রান্সফার করতে চাইছে না। সব কিছুরই বয়স হয়ে যাচ্ছে।
খুব ছোটবেলায় আমাদের বাড়ির পূবদিকে তেমন কোনো বাড়িঘর ছিলো না - ছিলো দিগন্ত বিস্তৃত এক খোলা মাঠ আর সেটা পেরিয়ে গেলে জঙ্গল। চলতি ভাষায় সে জায়গাটার নাম ছিলো “শেয়ালডাঙা”-র মাঠ। লিট্যেরালি সেখানে শিয়ালের বসবাস ছিলো, আর রাত একটু গভীর হলেই তাদের সম্মিলীত “হুক্কা-হুয়া” ডাক দূর দূরান্ত থেকে স্পষ্ট শোনা যেতো। সেই মাঠের মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছিলো ট্রেন যাবার জন্যে, আপ-ডাউন পাশাপাশি দু'জোড়া লাইন। ডাউনের দিক থেকে ট্রেন 'সুভাষগ্রাম' স্টেশন ছেড়ে কিছুটা এগিয়ে এলেই, তাকে আমাদের বাড়ির তিনতলার ছাদ থেকে পরিষ্কার দেখা যেতো। বাবা প্রতিদিন অফিসে যেতেন সকাল ৭:১৫-র ট্রেনে। সোনারপুর স্টেশনে ঢোকার বেশ কিছুটা আগে থেকেই সেই ট্রেন হর্ন বাজাতে থাকতো, কারন সিগন্যালিং সিস্টেমের অবস্থা ছিলো খুবই সাধারণ মানের, আর স্টেশনের কাছের লেভেল (রেলওয়ে) ক্রসিংয়ের দু-দিকের দুটো গেটও হাতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, ম্যানুয়ালি ওঠানো-নামানো করতে হতো। ব্রিটিশরা রেলওয়ে ক্রসিংকে কেন যে লেভেল-ক্রসিং বলতো, তা আমি জানি না। তো, এই কারণেই স্টেশনে ঢোকার আগে ট্রেনের কিছুটা এক্সট্রা সময় লাগতো। বাবা ট্রেনের সেই হাঁক-ডাক শোনার পর তবে বাড়ি থেকে রওনা হতেন, আর প্রতিদিনই প্রায় মিনিট পাঁচেক ছুটতে ছুটতে ট্রেন ধরতেন।
তখনকার দিনের ট্রেনগুলোতে ওঠা-নামা করার জন্যে কয়েকটা পা-দানি বা ধাপ ব্যবহার করতে হতো। স্টেশনের থেকে ট্রেনের কামরার হাইট হতো বেশ কিছুটা করে উঁচু। তখন অবশ্য 'ট্রেন' শব্দটার থেকে “রেল গাড়ি” কথাটাই বেশি প্রচলিত ছিলো। আর এই “রেল গাড়ি” কথাটা মনে আসতেই কোথা থেকে যেন একগাদা স্নেহ ভালবাসা মাথার মধ্যে এসে হাজির হয়ে গেলো !! তারই হাত ধরে ধরে মনে পড়ে গেলো সেই কাঠের হাতলের দুলুনি, বাদাম-ওয়ালার হাঁক, ভাঁড়ের চা, ঘটর-ঘটর ছন্দ, জানালায় অসময়ে বৃষ্টির ছাঁট, শীতের দুপুরের রোদ, রেলগাড়ির ফাঁকা সীটগুলোকে অবজ্ঞা করে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা, সদ্য আবিষ্কৃত প্রেমিকার আঙুলের ডগায় গোপন নিষ্পাপ ছোঁয়া, আরো কত্তো কি...... অন্য দিকে আবার "ট্রেন" শব্দটার মধ্যে কেমন যেন একটা কাঠ-কাঠ, স্কুলের ইংলিশ দিদিমণি-ওয়ালা ভাব আছে। ট্রেন মানেই যেন ঘাম, অফিস টাইম, চেঁচামিচি, তাস-পেটানো, পকেটমার, জনৈক টিফিন-বাক্সের গুঁতো, দম বন্ধ ভিড়। তার সাথে ফাউ হিসাবে পাওয়া আচমকা ঝগড়া, ডেলি-প্যাসেঞ্জারির উগ্র-হুল্লোড়, “আরেকটু চেপে বসুন না দাদা !!”-র বেলেল্লেপনা আবদার, ঘড়ি দেখে আঁতকে ওঠা “আজকেও এত লেট !” -- ট্রেন যদি সওদাগরি আপিসের খ্যাঁকখ্যাঁকে ওপরওয়ালা হয়, তবে কু-ঝিকঝিক রেলগাড়ি যেন ফেলে আসা দিনের ছোট্ট , মিষ্টি স্কুল-প্রেমিকা.......
তখনকার দিনের ট্রেনগুলোতে ওঠা-নামা করার জন্যে কয়েকটা পা-দানি বা ধাপ ব্যবহার করতে হতো। স্টেশনের থেকে ট্রেনের কামরার হাইট হতো বেশ কিছুটা করে উঁচু। তখন অবশ্য 'ট্রেন' শব্দটার থেকে “রেল গাড়ি” কথাটাই বেশি প্রচলিত ছিলো। আর এই “রেল গাড়ি” কথাটা মনে আসতেই কোথা থেকে যেন একগাদা স্নেহ ভালবাসা মাথার মধ্যে এসে হাজির হয়ে গেলো !! তারই হাত ধরে ধরে মনে পড়ে গেলো সেই কাঠের হাতলের দুলুনি, বাদাম-ওয়ালার হাঁক, ভাঁড়ের চা, ঘটর-ঘটর ছন্দ, জানালায় অসময়ে বৃষ্টির ছাঁট, শীতের দুপুরের রোদ, রেলগাড়ির ফাঁকা সীটগুলোকে অবজ্ঞা করে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা, সদ্য আবিষ্কৃত প্রেমিকার আঙুলের ডগায় গোপন নিষ্পাপ ছোঁয়া, আরো কত্তো কি...... অন্য দিকে আবার "ট্রেন" শব্দটার মধ্যে কেমন যেন একটা কাঠ-কাঠ, স্কুলের ইংলিশ দিদিমণি-ওয়ালা ভাব আছে। ট্রেন মানেই যেন ঘাম, অফিস টাইম, চেঁচামিচি, তাস-পেটানো, পকেটমার, জনৈক টিফিন-বাক্সের গুঁতো, দম বন্ধ ভিড়। তার সাথে ফাউ হিসাবে পাওয়া আচমকা ঝগড়া, ডেলি-প্যাসেঞ্জারির উগ্র-হুল্লোড়, “আরেকটু চেপে বসুন না দাদা !!”-র বেলেল্লেপনা আবদার, ঘড়ি দেখে আঁতকে ওঠা “আজকেও এত লেট !” -- ট্রেন যদি সওদাগরি আপিসের খ্যাঁকখ্যাঁকে ওপরওয়ালা হয়, তবে কু-ঝিকঝিক রেলগাড়ি যেন ফেলে আসা দিনের ছোট্ট , মিষ্টি স্কুল-প্রেমিকা.......
No comments:
Post a Comment