Showing posts with label পূজা. Show all posts
Showing posts with label পূজা. Show all posts

Sunday, January 19, 2014

হলুদ গাঁদার ফুল দে এনে দে...

পূজা বাঙালীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ - বাঙালী thrives on পূজা। বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগে থাকলেও আমাদের ছোটবেলাকার সময়ে 'পূজা' বলতে মোটামুটি তিনটে পূজাকেই ধরা হতো। প্রথম obviously দেবী দূর্গা - অর্থাৎ দূর্গাপূজা - যা কিনা বাঙালী ঐতিহ্য আর জাঁকজমকের প্রতীক। তাঁরই হাত ধরে ধরে চলে আসতেন শক্তিময়ী কালীঠাকুর, যে পূজা ছিলো মূলত: আতসবাজি আর আলোর রোশনাইয়ের যুগল সম্মেলন।  এরই মাস তিন-চার পরে আসতো সরস্বতী পূজা - যা ছিলো এককথায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের, এবং বিদ্যার্থীদের একান্ত আপনার পূজা। লক্ষ্মী, জগদ্ধাত্রী বা বিশ্বকর্মা পূজোগুলোকে ঠিক সেই অর্থে পূজা বলে মনে হতো না। অবশ্য এসবই সেকালের কথা। আজকাল অবশ্য যে কোন পূজা এলেই সর্বপ্রথম  ডোনেশন, শব্দ-হুঙ্কার, মদ-মারামারি আর দূর্ধর্ষ জ্যামের কথাই মনে চলে আসে - ভক্তি আর তেমন ঠিক আসেনা।
আমাদের বাড়ির ছাদ 
দূর্গাপূজায় মনে ভক্তির থেকে বরং শ্রদ্ধা আর সম্ভ্রমের ভাবই বেশি করে জাগতো - সেটার পিছনে অবশ্য শ্রদ্ধেয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মহাশয়ের রোমাঞ্চকর, মন্দ্র-মুগ্ধ কন্ঠে মহালয়ের ভোরের স্ত্রোত্র-পাঠের একটা জোরালো ভুমিকা থাকতো। কালীপুজায় লক্ষ্য থাকতো কখন তৈরী-করা ছুঁচো-তুবড়ি গুলোকে, বা বাজার থেকে কিনে আনা আতসবাজি গুলোকে একের পর এক ফাটাবো, বা কিভাবে বাড়িটাকে টুনি বাল্বের আলো দিয়ে সাজাবো, এইসব। কিন্তু সরস্বতী পূজায় মনের নির্বিচল ভক্তি আর প্রার্থণা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতো। কি করে, বা কারা যেন যেন মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো যে সরস্বতী ঠাকুরকে ভক্তি না-জানালে পরীক্ষায় কখনোই ভালো কিছু করতে পারবো না - তা সে যে পরীক্ষাই হোক না কেন! সেই ভয় থেকেই মনে হয় চলে আসতো ভক্তি - আর তারই হাত ধরে ধরে কখন চলে এসেছিলো ভালোবাসা। সন্ধ্যার দিকে  বাবা অফিস থেকে ফিরলেই তাঁর হাত ধরে ট্রেনে চেপে উঠে পড়তাম কলকাতার দিকে। কখনো ঢাকুরিয়া, কখনো বালিগঞ্জ, কি শিয়ালদহের নানান রাস্তা ধরে ঘুরে ঘুরে, সারি-সারি ঠাকুরের মধ্যে থেকে আমাদের পকেটের পূজার বাজেট স্ট্রেচ করতে করতে, ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে সেরা ঠাকুরটি বেছে নিতাম। তারপর তাঁকে ঘাড়ে করে নিয়ে, ট্রেনের ভীড়ের হাত থেকে সযত্নে আগলে রেখে, নানান পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বাড়ি পৌঁছাতাম। প্রায় মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে মা-পিসিমার শাঁক বাজানোর শব্দে হঠাৎই খেয়ালে আসতো যে কি ভীষণ ক্ষিদে পেয়ে গেছে!! 

বাবা এর কয়েকদিন আগে থেকে, বাজার থেকে কিনে যোগাড় করে রাখতেন চাঁদমালা, শোলার কারুকাজ করা ঠাকুরকে সাজানোর নানান ধরনের জিনিষ, যাবতীয় পুজাসামগ্রী, আর কিনে আনতেন রং-বেরঙের পাতলা পাতলা ঘুড়ির কাগজ - লাল-নীল-হলুদ-বেগুনী-সবুজ-সাদা-কমলা। রাত জেগে জেগে সেগুলো কাঁচি দিয়ে ট্র্যাঙ্গেল আকারে কেটে, থাক-থাক করে গুছিয়ে রাখা হতো। ঠাকুরের হাতে থাকা বীণার গায়ে কয়েকটা সাদা মোটা সুতো আলপিন দিয়ে সযত্নে বেঁধে দেওয়া হতো, সেটার  'তার' হিসাবে। পূজার দিন ভোরসকালে উঠে, ঘাড়ে করে কাঠের মই নিয়ে, বাড়ির ছাদে গিয়ে হাজির হতাম সেইসব রঙিন কাগজগুলোকে সঙ্গে করে - সাথে থাকতো একবাটি আঠা আর টুনদড়ির গোলা। বাড়ির ছাদের ঠাকুরঘরের মাথা থেকে ছাদের রেলিঙের নানান দিক পর্যন্ত টুনদড়ি টাঙিয়ে টাঙিয়ে সেই সব তিনকোণা কাগজগুলোকে, রঙের কম্বিনেশন বজায় একের পর এক আঠা দিয়ে লাগিয়ে চলতাম। শীতশেষের সকালের মৃদুমন্দ হাওয়ায় সেই রঙিন কাগজের দলেরা যেন হেসে হেসে কাঁপতে থাকতো। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও এসময় ঠাকুর ঘর সাজানোর নানান কাজে লেগে যেতো - সে ছিল এক অদ্ভুত আনন্দ, উত্তেজনা আর ভালোলাগা সময়। এরই মাঝে নীচের তলা থেকে মায়ের হাঁক শোনা যেতো, "ওরে! ঠাকুর মশায় এসে গেছেন!" - তড়িঘড়ি করে স্নান করার জন্যে নিচে নেমে আসতাম।  ঠাকুরমশায় এই দিন থাকতেন মহাব্যস্ত - কিছুতেই একমুহূর্ত বেশি অপেক্ষা করতে চাইতেন না। শাঁক-কাঁসরঘন্টা বাজানোর মধ্য দিয়ে দাদা ঘাড়ে করে দেবীপ্রতিমাকে নিয়ে চলতেন নিচের তলা থেকে ছাদের ঠাকুরঘরের দিকে। ছোটদি বাড়ির টবে ফুটে থাকা গাঁদাফুল তুলে, মালা তৈরী করে ঠাকুরের গলায় দিয়ে দিতেন। বাজার থেকেও কিনে আনা হতো হালকা-হলুদ, গাড়-হলুদ, কমলা রঙের একগুচ্ছ গাঁদাফুলের মালা। সেই সমস্ত মালা পরে, চাঁদমালা হাতে নিয়ে সুসজ্জিত হয়ে, আমাদের ছোট্ট ঠাকুরঘর আলোয় ভরিয়ে দিয়ে বিরাজমান হতেন দেবী সরস্বতী। আমরা পুকুর থেকে চট করে একটা ডুব দিয়ে, বা কলঘরে ঢুকে  কোনোমতে এক বালতি জল মাথায় দিয়ে, গা-হাত মুছে, নতুন জামাকাপড় পরে ঠাকুরঘরের দিকে ছুটতাম, হাতে থাকতো বেশ কয়েকটা পড়ার বই - যার মধ্যে কেশবচন্দ্রের অঙ্কের বই, মাইতি-চৌধুরীর কেমিস্ট্রির বই, আর রেনে-মার্টিনের ইংরাজি গ্রামারের বই অবশ্যই থাকতো প্রাইম সদস্য হিসাবে। সেই বইগুলোকে দেবীর পায়ের কাছে সারি দিয়ে সাজিয়ে, হাত জড়ো করে বসে যেতাম ঠাকুর মশায়ের পাশে বা পিছনে - যে যেরকম পারে। মেঘমন্দ্র কন্ঠে ঠাকুরমশায় দেবী-স্ত্রোত্র পাঠ করে চলতেন। ধুপ-ধুনোর অপরূপ গন্ধে ভরা সেই  ঠাকুরঘরে বসে, একগাদা গাঁদাফুলের মালায় সুসজ্জিত সেই দেবী প্রতিমার প্রশান্তি-ভরা, অসম্ভব সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে বিভোর হয়ে যেতাম - অবাক মনে বিস্ময় জাগতো গতরাতের থেকেও আজ যেন তাঁকে আরো, আরও বেশী করে সুন্দর এবং প্রাণময়ী লাগছে !

অঞ্জলীর দেওয়ার পর  প্রণাম-প্রাথর্ণা শেষ করে আমরা ছাদ সাজানোর কাজকর্ম, যা-কিছু বাকি থাকতো, সব ঝটপট কমপ্লিট করে নীচে নেমে আসতাম। দিদিরা এর মধ্যে ঠাকুরঘরের কাজ গুছিয়ে প্রসাদ বিতরণ শুরু করে দিতেন। তার পর শুরু হতো বাড়ির দাওয়ায়, রোদ্দুরে মাদুর পেতে বসে, একসাথে খই-মুড়ি-কড়াইশুঁটি-নারকেল-শাঁকালু-মোয়া-নলেনগুড় সহযোগে নিরামিষ ব্রেকফাস্ট-কাম-লাঞ্চ - আর তার সাথে নির্ভেজাল আড্ডা, গল্পের বই পড়া - সময়ের কোনো হিসেবই থাকতো না। দূর-দূরান্তের পূজামন্ডপগুলো  থেকে ভেসে আসতো মাইকে বেজে চলা একের পর এক বাংলা গান - যার একটা আজ খুব করে মনে পড়ছে: রূপকুমারী মেয়ে মান করেছে - বাঁধবে না চুল, সে বাঁধবে না রে - হলুদ গাঁদার ফুল দে এনে দে...  

Thursday, September 19, 2013

পুজা sponsorship স্ট্রাটেজি...

Clock



ছোটবেলাকার সময়ে যে কোনো পূজায় চাঁদা তোলার গুরু দায়িত্বটি সাধারনত পাড়ার দাদা টাইপের, (অ)কাজ-খুঁজে-বেড়াই ছেলেরাই সাগ্রহে লুফে নিতো। কারণটা সেই বয়সেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম - কিছুই না, এই ফাঁকতালে চাঁদা-প্রদানকারী বাড়িতে থাকা অবিবাহিত সুন্দরী (সুশ্রী হলেও চলবে) বালিকা, তরুণী বা বৌদিদের সাথে ক্ষণিকের বাক্যালাপ, একটু চোখে চোখ রাখা, মুখ টিপে হাসার ভঙ্গি করা - আর নিতান্তই কিছু না হলে 'ঝাড়ি' মারার সুযোগটা at least মিলে যেতো ! এর সাথে জুড়ে থাকতো চাঁদা তুলতে গিয়ে ঘন ঘন জল-পিপাসা রোগ। মনে আছে পাড়ার পল্টুদা (আসল নাম নয়) এই সব দিনগুলোতে নিজের পেটের ছোট ব্লাডারের ওপর কি রাগা-ই না রেগে যেতো ! কারণ চেয়ে চেয়ে অযথা গ্লাসের পর গ্লাস জল খাবার ফলে কয়েকটা বাড়ি হানা দেবার পর পরই তাকে 'জল-ত্যাগ'-এর জায়গা খুঁজতে হতো - আর যাই হোক চাঁদা তুলতে গিয়ে তো আর বাথরুমে যাবার মতো দৃষ্টিকটু আব্দার করা যায় না !  কখনো কখনো পুরানো বছরের নকল রিসিপ্ট দেখিয়ে, ভুলিয়ে ভালিয়ে আরও বেশি amount-এর চাঁদা তোলা হতো ! সে ছিলো এক অদ্ভুত আনন্দ আর উত্তেজনার দিন !

তো, সেই সময়কার পূজার চাঁদা-তোলা পার্টির জুলুমবাজদের হাত থেকে বাঁচতে আমার স্বর্গীয় পিতৃদেব এক অন্য উপায় বার করেছিলেন - একে শিক্ষণীয়ও বলা যেতে পারে । তিনি একটু গম্ভীরভাবে চাঁদা তুলতে আসা জনগণকে 'দেবী'র নামের বানান উচ্চারণ করতে বলতেন - বাকিটা তারপর হতো এক দর্শনীয় এবং শ্রবণীয় আরাম ! বিশেষ করে সরস্বতী পূজার সময়ে তাঁর এই পদ্ধতি 100% খেটে যেতো। বানান উচ্চারণের ভুলের মাত্রার উপরে চাঁদার amount directly নির্ভর করতো। একবার মনে আছে সরস্বতী ঠাকুরের নামের বানান 'ষরোস-শতি' শুনে তিনি তাঁর পায়ের খড়ম খুলে মারতে গিয়েছিলেন। বেশিরভাগ সময়েই ভুলটা হতো 'ব' টা কোথায় থাকবে, সেই নিয়ে। সেই প্রথম আমার 'Permutation' নামক বিষয়টির সাথে পরিচয়! এই কারণেই মনে হয় চাঁদা তোলার লিস্টে আমাদের বাড়ির নাম সবার লাস্টে থাকতো। তবে দূর্গা বা কালী ঠাকুরের নামের বানান অপেক্ষাকৃত সোজা হবার দরুণ, এই ধরনের ভুলের মাত্রা অনেকটাই কমে যেতো - যার ফলে দূর্গা বা কালী পূজার সময়ে পিতৃদেবের সেই ট্যাকটিক্স তেমন খাটতো না। 


আজকালকার পূজা অবশ্য অনেকটাই বদলে গেছে - শহরের বেশিরভাগ পূজার বাজেট আজকাল আর শুধু চাঁদাতে তোলা টাকার উপরে নির্ভর করে থাকে না। এখন হলো কর্পোরেট স্পনসরশীপের যুগ পূজা কমিটি এখন তাঁদের 'Branding Rights' হয় কোনো TV channel বা কোনো উঠতি রক বা পপ ব্যান্ডকে দিয়ে দেয়। বেশ কয়েক বছর আগে কোনো এক পত্রিকায় বা আর্টিকেলে পূজার Sponsorship আর বাজেট স্ট্রাটেজি নিয়ে একটা মজার প্রতিবেদন পড়েছিলাম - যার কিছু কিছু অংশ এখনো বেশ মনে আছে।  পূজার গন্ধে গন্ধে সেই প্রতিবেদনটির কথা আবার মনে পড়ে যাচ্ছে। 

সে বছরটা ছিলো সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় - আমাদের Big-M তখনো তেমন 'বি-গ' হয়ে ওঠেন নি - কেবল তিনি তাঁর দলবল নিয়ে 'Tata Nano'-র প্ল্যান্টে ঢুকতে যাওয়া লোকেদের বেদম মারধর শুরু করেছেন - এর সাথে ঢিল-পাটকেল ছোড়া আর 'টাটা বাই-বাই'-এর উদ্দাম হুঙ্কার তো চলছেই। উঠতি মিউজিক ব্র্যান্ড পার্টি আর টিভি চ্যানেলের দৌলতে পূজার স্পন্সরশিপ যোগাড় করাটা আর তেমন কোনো সমস্যাই নয় ! অন্যদিকে পলিটিকাল ঝ্যাঁটার মার সইতে সইতে ইন্ড্রাস্টিগুলো একের পর এক অন্য রাজ্যে চলে যাওয়ায় জায়গাও অফুরন্ত। পূজা প্যান্ডেল যত বড়োই হোক না কেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা দেখা দিচ্ছে অন্য দিকে - lots of other compromise... পূজা কমিটিতে কিছু বাম-ঘেঁষা লোকজনও আছেন, যেরকম থাকেন আর কি সব জায়গাতেই। তাঁরা চাইছেন মা-দূর্গার মুখের আদল 'মমতা'দির মতো করতে, এবং দু-মুখো অসুর করতে, যাতে এক  মুখে 'রতন টাটা' আর অন্য মুখে 'বুদ্ধদেব ভট্টচার্জি' থাকতে পারেন। খুব অন্যায় আব্দার কিছু নয় - কিন্তু পূজা কমিটির অন্য সদস্যেরা এতে মন খুলে সায় দিচ্ছেন না - কারণ দিদি সবেমাত্র তাঁর PhD (dubious) 'লাভ' করেছেন। দূর্গা ঠাকুরের গলায় তাঁর মুখ বসালে যদি দিদির vegetarian সমর্থকেরা এসে চেয়ার নিয়ে ভাঙ্গা-ভাঙ্গি শুরু করে?  তখন সেই গরুর দলকে সামলাবে কে? এর থেকে বরং ঠাকুরের জন্যে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, বা জ্যেসিকা সিম্পসন অথবা আমাদের দীপিকা পাড়ুকনের মুখ দেওয়া অনেক, অনেক better হয়তো বা এতে 'Red Bull' শারদ সম্মানটাও মিলে যাবে ! আর যদি এতেও মতের মিল না হয়, তখন 'কলাবউ' তো আছেনই।  দিদির লাজুক মুখের একটা মিষ্টি ছবি কলাগাছে লাগিয়ে ঘোমটা টেনে ঢেকে দেওয়া যাবে - তাহলে তো দুই-দিকই বজায় থাকবে 

অন্য দিকে কপিরাইট পাওয়া টিভি চ্যানেলের কর্ণধার ঠাকুরের মূর্তির দিকে ক্যামেরা না বসিয়ে বরং প্যান্ডেলে জমা হওয়া দর্শনার্থীদেরকে ঘিরে একগুচ্ছ ক্যামেরা বসাতে চাইছেন - ভিন্ন, ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে। কারণ গতবছরে নাকি তাঁরা নিজেদেরকে 'তেমন করে' প্রচার করতে পারেন নি - এবছরে তাই তাঁরা কোমর বেঁধে নামতে চাইছেন। উর্বর মস্তিস্কের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহার করে তাঁরা নতুন এক প্রোগ্রাম-এর বিজ্ঞাপণ অলরেডি শুরু করে দিয়েছেন: "ঘরে বসে ঝাড়ি" - অর্থাৎ মৃন্ময়ীর কাছে আসা চিন্ময়ীদের টেরিয়ে-বেঁকিয়ে, লুকিয়ে-চুরিয়ে না দেখে, বাড়িতে সোফায় বসে আরাম করে, Lays চিপস-এর প্যাকেট হাতে নিয়ে, তারিয়ে তারিয়ে দেখুন।  ঠাকুরের মুখ থাকবে প্রতি তিন মিনিটে ১৫ সেকেন্ড, বাকিটা সব-ই close রেন্জ-এ  'backless blouse' বা দিদিমনিদের 'টাইট কামিজ' - বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে !! দেবীর মূর্তিকে নকল ভক্তি দেখানোর হাত থেকে এক সম্মানীয় রেহাই।  ঘরে যদি ভট করে ঠাকুমা কি বাবা ঢুকে পড়েন, তো কোনো অসুবিধা নেই - ১৫ সেকেন্ডের ঝটতি মূর্তি-প্রদর্শন তো রয়েছেই ! এছাড়া terrorist-রা যদি পূজাতে নিজেদের খুশি মতো participate করে, তাতেও কোনো সমস্যা নেই - গায়ে একটু আঁচ পর্যন্ত লাগবে না !

প্রমোশনাল মিউজিক ভিডিওতে থাকছেন বাংলার সুকুখ্যাত মেগাস্টার প্রসেনজিৎ - তিনি খালি পায়ে দুলে দুলে নাচবেন উজবেকিস্তান থেকে উড়িয়ে আনা একদল যুবতী মডেলদের সাথে - all dressed in ট্রাডিশনাল বাঙালী লাল-পাড়-সাদা-শাড়ি। প্রোগ্রামের গালভরা নামও ঠিক হয়ে গেছে: "জীবন্ত প্রতিমা দর্শন" । মুম্বাইয়ের হিমেশ রেশমিয়া-কে টুপি ছাড়া হাজির করানোর জোর চেষ্টা চলছে। যদি সেটা একান্তই না খাটে তো 'অনীক ধর' রয়েছেনই। তিনি অবিকল মেয়েলি গলায় 'কাজরা রে...', কি শচীন কত্তার 'তুমি এসেছিলে পরশু...' নাঁকি সুরে গেয়ে আসর মাত করে দেবেনই দেবেন। 

Individual কর্পোরেট স্পনসরশিপ যোগাড়ের নানান প্রচেষ্টা আশাপ্রদ গতিতে এগিয়ে চলছে - যেমন 'Dr. Lal’s Weight Loss Clinic' লর্ড গনেশজিকে আর 'M. P. Jewellery' লক্ষ্মীদেবীকে স্পনসর করার ব্যবস্থা করেছেন।  যদি সরস্বতী ঠাকুরের মাথায় 'Flier' সাঁটকাতে দেওয়া হয় তো 'Sharma IIT Definitive' এক কথায় রাজি আছেন। এছাড়া Raymonds-এর কেস্টু-বিস্টুরা গত সপ্তাহেই কার্তিক-ঠাকুরের বডি-র মাপ-জোক নিয়ে গেছেন, তাঁরাই ওনাকে এবছর নিজেদের ড্রেস-এ সাজিয়ে স্পনসর করবেন। 

স্বয়ং মা দূর্গার ভার নিয়েছেন KKR অধিপতি মি: খান, মাত্র ১৫ লাখের বিনিময়ে। প্রতিদানে মা দূর্গাকে KKR-এর উদ্ভট Golden হেলমেট পরানো হবে, আর মায়ের হাতে ত্রিশুলের বদলে উইকেট ধরিয়ে দেওয়া হবে। মায়ের মাথার পিছনে শোলার কাজের বদলে, সেমি-সার্কেল করে এক ফেস্টুনে বড়ো বড়ো করে লেখা থাকবে "করবো , লড়বো , জিতবো রে..."অসুরের এক হাতে অস্ত্র হিসাবে থাকবে বোমার আদলে তৈরী করা লাল ক্রিকেট বল, আর অন্য হাতে গ্রেনেড-এর আদলে 'উইকেটের বেল' আর অসুরের মুখ ও শরীর যদি সলমন খানের আদলে করা হয় তো এক্সট্রা ৫ লাখের প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়ে রেখেছেন। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে 'তুপর্ণ'-দাকে আনার কথা প্রথমে ভাবা হয়েছিলো, কিন্তু কারা যেন বেয়াড়া প্রশ্ন তুলেছে যে নিয়ম ভেঙ্গে যদি মহিলাকে দিয়েই উদ্ধোধন করানো স্থির হয়ে থাকে, তো why not 'ঋতুপর্ণা'-দি? দিদির সেক্স appeal তু-দা(?)র থেকে কম কোন দিক থেকে?   নাও, বোঝো ঠ্যালা!  অগত্যা তুপর্ণা-দিদি-ই আসছেন।  

প্রতিমা বিসর্জনের রাতে 'Gangnam' স্টাইলের ভাংড়া নাচের জন্যে নৃত্য পটিয়সী Rakhi Sawant-কে কন্টাক্ট করা হয়েছিলো - কিন্তু তিনি তাঁর রেট হ করে বাড়িয়ে দিয়ে বসে আছেন। এমন কি 'all-covered' জামা-কাপড় পরে নাচের প্রোপোজালেও বেশি টাকা চাইছেন। তাই সেই বাড়তি টাকা তোলার জন্যে গত সপ্তাহ থেকে মেন রাস্তাগুলোতে অবরোধ বসিয়ে, ট্রাক-লরী থামিয়ে জোর করে "মা-দূর্গা" ট্যাক্স নেওয়া শুরু হয়েছেপ্রথম প্রথম কিছু আপত্তি-প্রতিবাদের মুখোমুখি হলেও, যবে থেকে হকি স্টিক দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গা আর প্রকাশ্যে গাড়ির গায়ে গণ-মূত্র বিচ্ছ্ররণ শুরু হয়েছে, তবে থেকে লাভের মুখ দেখা দিয়েছে। এছাড়া petty cash-এর জন্যে তো usual intimidation, vandalism, scratching car body with Thums-Up cap, বাড়ির দরজার সামনে 'মল-ত্যাগ' করে দেওয়া, ইত্যাদি তো চলছেই, - মানে যেমন চলার কথা আর কি !!

Hopefully মা দূর্গা আমাদের সহায় হবেন, আর বিগত বছরগুলোর মতোই দু-হাত ভ'রে আশীর্বাদ দিয়ে তবে মর্ত্যধাম থেকে বিদায় নেবেন।  
"জয় মা দূর্গা, দূর্গতিনাশিনী, কৈবল্য-দায়িনী, সর্ব দুঃখ-হরণী, সর্ব পাপ-বিনাশকারিনী..."




2013 সালে ক্যালিফোর্নিয়া বে-এরিয়ার "পশ্চিমী" পুজা সংগঠন থেকে দূর্গাপুজা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত হওয়া  'অঞ্জলি' পুজা-ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিলো আমার এই আর্টিকেলটি। 
                                          এইখানে দেওয়া হলো সেই গল্পের লিঙ্কটি   



Thursday, September 12, 2013

পূজার স্মৃতি

চাওয়া-পাওয়ার পথে পথে দিন কেটেছে, কোনো মতে,
   এখন সময় হলো তোমার কাছে আপনাকে দিই আনি,
  জানি, বন্ধু জানি, তোমার আছে তো হাতখানি ...





অবশেষে বর্ষা বিদায় নিলেন। শরৎ এসেছে নীল আকাশের আঁচল উড়িয়ে। তারার চুমকি বসান রাত। পেঁজা তুলার মতো পাহাড়ের formation - ভাঙা কলকাতার দক্ষিণের আকাশের দিকে ঘাড় তুলে তাকালে মনে হয় যেন ডুন ভ্যালিতে লেংটে বেড়াচ্ছি। মৃদু মন্দ বাতাস ঘাড়ের কাছে প্রেয়সীর নিশ্বাসের মতো বলতে চাইছে 'আমার রাজা, শরৎ এলো, মৃগয়ায় যাবে না...' - হায়, কোথা সে বনসখী, আর কোথা সে জল। রাজারা আজকাল আর মৃগয়ায় যান না। এখন অন্য মৃগয়ার যুগ। কথায় কথায় লাশ পড়ে যায়।  

দেখতে দেখতে আরও একটা পূজা এসে গেলো... বয়স আরও একটা বছর বেড়ে গেলো...  Final destination-এ পৌঁছাতে আরও একটা বছর কম লাগবে। প্রতি বছর জন্মদিনে, আর বিশেষ করে পূজার সময়ে এই ভাবনাটা মাথায় চাড়া দিয়ে ওঠে   ভাবতেই কি রকম অদ্ভুত একটা শিহরণ জাগে... কিন্তু এসব তো  'এই আমি'-র  চিন্তা।  সেই সুদূর  'অতীতের আমি'  সাগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতো ক-খ-ন পূজা আসবে।  আমাদের বাৎসরিক কালেন্ডার খোলাই হতো দূর্গা পূজার তারিখ গুলোকে পেন দিয়ে গোল মার্ক করে করে। তারপর শুরু হতো এক এক করে দিন গোনা: "তোমারই পথ পানে চাহি..."   - সত্যি, মা-জননী তোমার তুলনা নেই। এই ক'টা দিন তুমি শহরকে একেবারে মাতিয়ে দাও।

পুরানো দিনের এক লেখক বলেছিলেন পূজায় যাঁরা কলকাতা ছাড়তে চান না তাঁরা হয় অথর্ব, নয় তো হা'ঘরে। এ সময়টা হলো, "চলো  রীণা,  ক্যাসুরিনার ছায়া গায়ে মেখে..."   - হিলটপ হোটেলে ফায়ার প্লেসের ধারে কেৎরে বসো। জল নয়, লাল পানীয় থাকুক হাতে, দামী লম্বা বিদেশী সিগারেট ঠোঁটে  -  সঙ্গে লো-ভলিউমে চলতে থাকুক গুলাম আলী সাহেবের মায়াবী গজল: "হাঙ্গামা হ্যায় কিউ বারপা, থোড়ি সি যো পি-ই লি হ্যায়..."   (note to self: তবে 'পি' টা শুধু হিন্দিতেই সীমাবদ্ধ থাকুক !)   বাইরের আকাশ ঢালু হতে তে বহু নীচে, গুঁড়ি গুঁড়ি গাছ, দেশলাই-দেশলাই বাড়ি, আর ফিতে ফিতে নদীর উপর টাল খেয়ে পড়েছে। বহু দূরের আকাশের তলায় সেই একঘেয়ে ধ্যাদধেরে, ম্যাটমেটে কলকাতা। ঢাক বেজেই চলেছে, 'ঢ্যাম কুড়-কুড়, ঢ্যাম কুড়া-কুড়'। প্যান্ডেলের বাঁশের আড়ায় উঠে, সস্তা নীল প্যান্ট পরা দস্যি ছেলের দল বাঁদরের মতো লাট খেয়েই যাচ্ছে। লাঠি সুদ্ধু কাঁপা-কাঁপা হাতদুটো জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বৃদ্ধ মানুষেরা মা দূর্গাকে নমস্কার করতে করতে মনে মনে বলছেন 'কি যুগ-ই না এনে ফেললেন দেবী'।  


ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি পূজা মানেই প্রচুর প্ল্যানিং, প্রচুর স্বপ্ন - প্রচুর ঘুরে ঘুরে, 'প্রচুর কম' কেনাকাটা... ছোটবেলার বেশিরভাগ পূজার সময়েই দাদা-দিদিদের হাত ধরে ট্রেনে চাপতাম কলকাতা থেকে পূজার বাজার করবো বলে। সে এক অবর্ণনীয় উত্তেজনা - বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করতেন লোকাল দোকানগুলোর কি দোষ - কিন্তু কে শোনে কার কথা !  পার্টিকুলার কোনো দোকান ঠিক করা ছিলো না আমাদের - বৌবাজার, বাগবাজার, কলেজ স্ট্রিট, কিম্বা গড়িয়াহাটের সারি সারি দোকানগুলো ঢু মেরে মেরে যতক্ষণ না এনার্জির ব্যাটারি শেষ হতো, হেঁটেই চলতাম - 'চলতি কা নাম গাড়ি', বাবা !  
সেই সুদূর অতীতে কলকাতায় প্রথমবার পূজার বাজার করতে এসে শক খেলাম যখন দেখলাম লম্বা, সুন্দরী এক মহিলাকে এক কাঁচের শো-কেসের মধ্যে রঙ্গীন শাড়ি পরিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমার থমকে দাঁড়ানো ভয়ার্ত মুখ-চোখ তখন পথ চলতি লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেছে ।  দিদির বকা খেয়ে সহসা সম্বিত ফেরে - "হাঁদা কোথাকার - ওটাকে বলে ম্যানিকুইন - এবারে চল সোজা..." --- শাড়ি বিক্রির সাথে সুন্দরী ম্যানিকুইনের বন্দী থাকার কি সম্পর্ক সেটা বোঝা গেল না। অনিচ্ছা স্বত্তেও হাঁটা শুরু করলাম, পিছু ফিরে ফিরে তাকাতে তাকাতে - আমার স্পষ্ট মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটির চোখের পাতা দুটো থির থির করে কাঁপছে - যেন ওখান থেকে সে বেরুতে চাইছে - কিন্তু কি করে এদেরকে তা বোঝাই? 

কলকাতার ফুটপাথগুলোতে তখন হকারদের রমরম অবস্থা - 'Big-M' তখনও ক্ষমতায় আসেনি - বামফ্রন্টের মাথাতে তখনও 'Operation Sunshine'-এর সু বা কুবুদ্ধি ঢোকেনি। চারিদিকে ভীড়ে ভীড়াক্কার - হাঁটা চলাই দায় হয়ে উঠেছে, তো কেনাকাটা !!  এর মধ্যেই কানে আসে হকারদের কর্ন-ভেদী হুঙ্কার: "সেল, বৌদি সেল..." - আবার থমকে দাঁড়াই - তাহলে বৌদিও 'সেল' হচ্ছে? এই তো সুযোগ - একটা কিনে নিয়ে গেলেই তো হলো। বাড়িতে সবই আছে, কিন্তু একটাও বৌদি নেই... আবার বকা খাওয়া । বাংলা ভাষা এতদিনে জানতাম খুবই বোধগম্য - কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেশিরভাগ কথার-ই দুটো করে মানে আছে - Heisenberg-র Uncertainty Principle? 

এর ঘামের সঙ্গে তার ঘাম, তার সাথে আমার ঘাম সব মিলে মিশে একেবারে জগাখিচুড়ি - ঠিক যেন গনসঙ্গীতের মতো: "তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা..."  -  শক্ত করে দিদির হাত খামচে ধরে এগিয়ে চলেছি - একবার হারিয়ে গেলে এই জনসমুদ্রে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।  নানাবিধ হুঙ্কারে চমকে চমকে উঠছি: "আসুন দাদা, আসুন দিদি - নতুন শার্ট, নতুন প্যান্ট  - সব হোল-সেল, হোল-সেল..." - যা দেখি তাই-ই আমার পছন্দ হয়ে যাচ্ছে - কিন্তু এই সব স্টলগুলোতে না ঢুকে আমরা কেন যে বড় বড় দোকানের পর দোকান ঘুরে চলেছি তা বোধগম্য হচ্ছে না। জিজ্ঞাসা করে বকা খাওয়ার চেয়ে চুপচাপ observe করে যাওয়াই better - সুতরাং চলেছি তো চলেছিই... ... এই দোকানের জামা পছন্দ হয় তো ম্যাচিং প্যান্ট পিস পাই না - আবার সব কিছু ঠিকঠাক হয় তো দামে কুলায় না !  শাড়ি সমুদ্রে ভাসমান হয়ে, গুনে গুনে পাক্কা বিয়াল্লিশ খানা শাড়ি দেখানোর পর যখন দোকানের মালিক শুনতেন যে "রং গুলো তেমন ঠিক পছন্দ হচ্ছে না...", তখন তাঁর বিরক্তি চাপা, মাপা হাসির মুখটা ক্রমশ: থমথমে আর চোখ দুটো লাল হয়ে উঠতো। তখনই বুঝতাম now is the time to move out !  পূজার বাজার করতে এসে কি বেঘোরে, চোরাগুপ্তে খুন হয়ে যাবো? 
একই দোকানের লোকজন, যারা শুরুতে আমাদের দেখে আহ্লাদে ফেটে পড়লো, যাবতীয় কুশল জানতে চাইলো - চা, না কফি, না কোল্ড ড্রিংক্স খাবো জিজ্ঞেস করতে করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো, সেই তারাই হিসেবের বেলায় এসে সহসাই কেমন যেন গোমড়ামুখো হয়ে উঠতেন - সবই এক অচেনা রহস্য !

পথচলতি নানান ঝক্কির মধ্যে মজার ঘটনাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যখন শিবের বাহন মাথা গরম করে লেজ তুলে রাস্তা ছেড়ে ফুটপাথের দিকে গঁতগঁত করে দৌড়ে তেড়ে আসে - মুহুর্তের মধ্যে ঘিঞ্জি ফুটপাথ প্রশস্ত হয়ে ওঠে !  কিম্বা হকারের নিষ্পাপ আর্তনাদ: "বৌদি, ও বৌদি - আরে, আমার ব্লাউস নিয়ে চলে যাচ্ছেন..." - পুরুষ মানুষেরও কি তাহলে ব্লাউসের দরকার পড়ে?  আরে নাহ: দড়ির ডিসপ্লেতে ঝোলা ব্লাউসের ক্লিপ-টি পথচলতি কোনো এক মহিলার মাথার চুলে আটকে গিয়ে সব সুদ্ধু ছুটে চলেছে তাঁর খোঁপার শোভা বাড়িয়ে !!  

অবশেষে ক্লান্ত সৈনিকের দলের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে - either পুঁজি শেষ অথবা পায়ে খিঁচ লাগা - "ক্ষ্যামা দে ভাই পূজার কেনাকাটা - চল বাবা, বাড়ি ফিরে চল -  প্লিজ আর না, অনেক হয়েছে কেনাকাটা..."। ক্ষুধায় ক্লান্তিতে বেঁকে-চুরে যাওয়া অবসন্ন শরীরটাকে কোনোমতে টানতে টানতে দল বেঁধে আমরা দাঁড়িয়ে পড়ি এক রোড-সাইড ফাস্ট ফুড, রোলের দোকানের সামনে।  "এই ভোলা ! চটপট পাঁচটা এগ-চিকেন এদিকে  -  তুরন্ত  !" - আ:হ  কি আরাম। শুনেও যেন প্রাণে তৃপ্তির ছোঁয়া - বেঁচে থাক বাবা ভোলা, ভোলানাথ আমার । 

~ ~ ~    ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~   ~ ~ ~  ~ ~ ~   ~ ~ ~

আজ সেই রামও নেই, রাজত্বও নেই  - পড়ে আছি শুধু আমি একা... যাঁদের হাত ধরে একদিন নিশ্চিন্তে ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম, তাঁদের অনেকেই আর আজ নেই, বা থাকলেও যোগাযোগ গেছে অনেক, অনেক কমে - রয়ে গেছে শুধু মার্ক করা ক্যালেন্ডার, আর কিছু ধূসর হতে শুরু করা স্মৃতির দল। ভরপুর আনন্দ দিয়ে শুরু হওয়া জীবনের রং আস্তে আস্তে ফিকে হতে শুরু করেছে। কার কাছেই বা কমপ্লেন করি ! মহাকালের অদৃশ্য খেলায় না-চাইলেও তো অংশ নিতেই হবে... পালাবার উপায় তো নাই।  কবিগুরু মহাজ্ঞানী, তাই ঠিকই বলে গেছেন: 
                  "জীবনদোলায় দুলে দুলে আপনারে ছিলেম ভুলে, 
                     এখন জীবন মরণ দু-দিক দিয়ে নেবে আমায় টানি,
                    জানি, বন্ধু জানি, তোমার আছে তো হাতখানি ..."
.
.
.
.
.

Resource inspiring this post (গান@YouTube - click to listen):