Thursday, December 19, 2013

কলেজ স্ট্রীট এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব...

কলেজ স্ট্রীটের বই পাড়ায় অনেক ঘোরাঘুরি করতাম, যদিও কফি-হাউসে সাহস করে কোনদিন যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মোটামুটি 'দেব লাইব্রেরি' আর সংস্কৃত কলেজের উল্টোদিকে থাকা 'কথা-ও-কাহিনী', ছিলো আমার মোস্ট ফেভারিট দুটো দোকান। 
দেব লাইব্রেরী - কলেজ স্ট্রীট, কলকাতা
কথা ও কাহিনী - কলেজ স্ট্রীট, কলকাতা
এই দুটো দোকানে আমি ব্যাগ-পত্তর জমা রেখে সোজা ভিতরে চলে গিয়ে বইয়ের পর বই ঘেঁটে চলতাম। দোকানের লোকজন কিছুদিনের মধ্যেই আমাকে চিনে গিয়েছিলো, তাই কেউ কোনো বাধা দিতো না। 'কথা-ও-কাহিনী' দোকানটা ছিলো বেশ বড়ো, আর তারা কলকাতার প্রায় যাবতীয় পাবলিশার্সেদের পপুলার বই রাখতো, কিম্বা বললে ঠিক খুঁজে খুঁজে অন্য পাবলিশার্সেদের কাছ থেকে এনে দিতো। 
কথা ও কাহিনী দোকানের ভিতর - কলেজ স্ট্রীট
এক সময়ে আমার মধ্যে কবিতা পড়বার phase চলে এলো, সবারই প্রায় আসে কোন-না-কোন সময়ে। তো, মাঝে মাঝেই আমি শনিবারের দিকে, বা কলেজের ক্লাস শেষে কলেজ স্ট্রীটের ওই দোকানে গিয়ে ঘন্টাখানেক ধরে নানান বই ঘেঁটে ঘেঁটে, গুচ্ছের কবিতার বই পড়ে, তারপর মাত্র দু'-একটা বই কিনে চলে আসতাম - কখনো কখনো আবার একটাও কিনতাম না !! কিন্তু তাতে দোকানের কাউন্টারে বসে থাকা হত্তা-কত্তারা কোনো মাইন্ড করতো না - কারণ আমি দোকানের অগোছালো বইদেরকে সব ভালো করে অ্যারেন্জ করে দিয়ে আসতাম - ফ্রী-তে (obsessive compulsive disorder?) - এই ভাবে আমি অনেক নন-পপুলার, অথচ ক্যালিবারওলা কবিদের সন্ধান পেয়ে গেছিলাম। পপুলার কবিদের, যেমন 'শক্তি-সুনীল-শঙ্খ', এই তিন মায়েস্ট্রেয়দের থেকে বরং আমার, 'সুজিত সরকার', 'প্রমোদ বসু', 'অরুন বাগচী', 'রনজিৎ দাশ', আরও অনেক স্বল্পখ্যাত কবিদের লেখা মনকে বেশি নাড়া দিয়ে যেতো।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে তখন মনে যথারীতি সংশয় দেখা দিয়েছে - প্রথম যৌবনের রক্ত সব কিছুর পিছনেই যুক্তি খোঁজে, লজিক দেখতে চায়। এরকম ভাবেই একদিন সহসা এক অচেনা কবির লেখা কয়েকটা লাইন মনকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে গেলো। তার পর থেকে ঈশ্বরের প্রতি সংশয় অনেকটাই কমে এসেছিলো। আজও মাঝে মাঝে, জীবনের অস্থির, অসহায় মুহূর্তগুলোতে, যখন আলো-আঁধারিতে পথ ঝাপসা হয়ে ওঠে, সেই অজানা কবির লাইন ক'টি মনে করি। মানুষের ক্ষমতা আজ বড়োই সীমাবদ্ধ - কি হয়তো চিরটাকাল তাইই ছিলো...

“নারকেল গাছের ঠিক ওপারেই রয়েছে অস্তগামী সূর্য্য,
কারণ পাতার আড়ালে ঢেকে আছে তার কিছুটা
হাঁটাপথে গেলেও ঠিক ধরা যাবে !

ঘর আঁধার করে চেয়ে থাকো - কিছু দেখতে পাবে না,
কিন্তু চোখ বন্ধ করে চেয়ে থাকো -
হাজার হাজার রঙের খেলা ফুটে উঠবে নিমেষে,
এ বিপুল রঙের জন্ম তোমার মনে - তাই
খোলা চোখে কখনো তাদের যাবে না আঁকা,
অথচ তোমাকে ঘিরেই বেঁচে আছে এরা

জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই পাহাড় ছোঁয়া যাবে
সত্যিকারের ছুঁতে গিয়ে টের পাবে, কষ্ট কিছু কম ছিলো না ।

ঈশ্বরের উপস্থিথিও বা অনেকটা সেই রকমই
কখনো কাছে, কখন দূরে -
বন্ধ চোখে একমনে, ধরা দেয় মনের কোণে ...”






No comments:

Post a Comment