Sunday, December 15, 2013

এক মহাপুরুষের ক্যালাইডোস্কোপ...

The word kaleidoscope comes from the Greek words kalos ‘beautiful’ + eidos ‘form’; one looking through a kaleidoscope can be thought as an observer of beautiful forms & shapes.



We’re all sent here with a mission or purpose, and we’re given the resources (or pieces) we need to fulfill it. Let’s look at them in a different way – shifting, rearranging, reorganizing – focusing on your talents & strengths, the path you’re meant to follow, using the gifts & pieces you’ve picked up along the way. 


সুদূর শৈশবে হাতে-গোনা কয়েকটি মাত্র দামী খেলনার মধ্যে আমার অন্যতম প্রিয় ছিলো কার্ডবোর্ডের তৈরী এক ক্যালাইডোস্কোপ। সেই ক্যালাইডোস্কোপ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিচিত্র বর্ণের নকশা দেখতে দেখতে চোখে ঘোর লেগে যেতো - বেলা যেতো কেটে অজান্তেই। আজ এই ঢলে-পড়া জীবনের মধ্যপথ অতিক্রম করার পরে মনের ক্যালাইডোস্কোপ নিয়েও আমার সেই একই দশা। ঘোর লেগেই চলেছে - স্মৃতিগুলো যেন একরাশ পেঁজা তুলো, ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ঘুরে চলেছে এদিক থেকে সেদিক - অনেকটা মাঝের ঝাঁকের মতোই। আবার কখনো কখনো মনে হয় সেগুলো ছেঁড়া ছেঁড়া কাপড়ের মতো - একেকটার একেক রকম রঙ। টুকরো গুলো একের সাথে এক জুড়ে জুড়ে বিচিত্র বর্ণের, অপরূপ নকশা বুনে তুলে চলেছে - ঠিক যেন ক্যালাইডোস্কোপের ভিতরে থাকা রঙিন কাঁচের টুকরোর দল। একটু মনোযোগ দিয়ে যে দেখবো, সে উপায়টুকু নেই - পলক ফেলার আগেই সব উধাও, সব শুনশান - কোথাও কেউ নেই!!  সহসা দেখি উল্টোদিকের দেওয়াল ফুঁড়ে উঁকি মারছে আরেকগুচ্ছ, স্বল্প-চেনা স্মৃতির দল... 

ছোটবেলায় শিশুমনের উপর সুপ্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে আমার পিতৃদেব বাড়ির বিভিন্ন ঘরের এবং আমাদের লম্বা L-শেপের দাওয়ার দেওয়ালে, পেরেক দিয়ে দিয়ে বিভিন্ন মহাপুরুষের পোর্ট্রেট-ওলা বড়ো বড়ো ফটো টাঙিয়ে রেখেছিলেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আশুতোষ, দেশবন্ধু চিত্ররঞ্জন, আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন, রাজা রামমোহন থেকে শুরু হয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র, গান্ধীজি, বাঘাযতীন, ক্ষুদিরাম, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ-তে এসে থেমেছিলো। ভোরবেলায় জোর করে ঘুম থেকে তুলে দেবার পরে, মনে একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাঁর কোলে চড়ে, চোখ কচলাতে কচলাতে সেই সব ফোটোয় জীবন্ত হয়ে থাকা কঠিন কঠিন মহাপুরুষদের সঠিক নামগুলো একের পর এক বলে চলতে হতো। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন তাঁর ছেলেকে এক মহাপুরুষ বানাতে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্যে দেশ জুড়ে কলেজ-ইউনিভার্সিটি আছে - আছে বিভিন্ন পে-গ্রেডের প্রফেসর-টীচার, কতো রেডিমেড টিউটোরিয়াল, মায় অনলাইন কোর্স পর্যন্ত। আবার সাধু-সন্ত বানানোর জন্যেও আছে মঠ-মনেস্ট্রি, আশ্রম, সংঘ - কিন্তু সেরকম নির্ভরযোগ্য শিক্ষক কোথায়? তাই হয়তো তিনি নিজেই সেই ভার নিজের হাতে তুলে নিয়ে আমাকে তাঁর একমাত্র ছাত্র বানিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ট্রেনিংয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি - কারণ মহাপুরুষ আমি আজও “ব'নে” উঠতে পারিনি। আমি তো কোন ছার, এমন কি নেতাজিও মহাপুরুষ হবার উদ্দেশ্যে কিছুকাল হিমালয়ের গুহায় সন্ন্যাসীদের কাছে সাধনার জন্যে গিয়েছিলেন - কিন্তু আধ্যাত্মিক সিদ্ধিলাভ তাঁর কপালেও ঘটে ওঠেনি। বরং নেতাজীর জীবনী পড়ে জানতে পারি যে তিনি তাঁর শিক্ষক “প্রফেসর ওটেন”-কে একবার কলেজ কম্পাউন্ডে নিজের হাতে বেদম প্রহার করেছিলেন, আর কবিগুরু স্বয়ং নেতাজীর সেই প্রহারকে মুক্ত কন্ঠে সমর্থন করেছিলেন !! 
আজ জীবনের এই মাঝপথে দাঁড়িয়ে বুঝতে পেরেছি যে মহাপুরুষ হবার ক্ষমতা আমাদের মতো সাধারণ, নগণ্য মানুষদের মধ্যে নেই, বা ঈশ্বর কখনো দেন নি। আর সেজন্যেই মহাপুরুষদের প্রতি আমাদের এতো দূর্বার আকর্ষণ। অন্য দিকে তথাকথিত দেব-দেবীদের প্রতি সেরকম কোন ভক্তি বা আকর্ষণ আমি আমার পিতৃদেবের মধ্যে তেমন লক্ষ্য করিনি। কিন্তু আমার পিসেমশাইয়ের অত্যাধিক বৈষ্ণব-প্রীতিতে সায় দিয়ে তিনি বাড়ির বিশাল উঠানটার ঠিক মধ্যিখানের কিছুটা অংশ, একটা গোল পদ্মফুলের আকারে মোজাইকের মতো লাল পাথর দিয়ে বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে ঐখানে কীর্তন পূজা করা যায় আর বৈষ্ণবপূজার 'সিন্নি', বাতাসা-হরিলুঠ, ইত্যাদি দেওয়া যায়। জ্ঞান হবার পরে সেই সুদূর ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন রকমের, ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের কীর্তনগান শুনে এলেও, সেজাতীয় গানের প্রতি আমার তেমন ভালোলাগা কখনও গড়ে ওঠেনি। কিন্তু সেই একঘেয়ে কীর্তন গানের সুরের রেশ কখন যেন আমার অবচেতন মনের গভীরে সেঁধিয়ে গিয়েছিলো। যে কারণে পরবর্তীকালে কীর্তনাঙ্গের ছোঁয়াওয়ালা যে কোন গানই, সে রবীন্দ্রসঙ্গীতই হোক, বাউল বা বাংলা আধুনিকই হোক, একবার কানে ঢুকে গেলে, মনের মধ্যে অবিরাম গতিতে বেজেই চলতে থাকে। এই যেমন হয়েছে আজ সকাল থেকে - মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই ফেলে আসা দিনের, কীর্তনাশ্রয়ী একটি গান মাথার মধ্যে অবিশ্রান্ত সুরে বেজেই চলেছে - সে তো নাম ধ'রে কোনদিনও ডাকেনি আমায়, যার কথা ভেবে ভেবে সব ভুলে যাই, সে তো চোখ তুলে কোনদিনও দ্যাখেনি আমায়...



No comments:

Post a Comment