Sachin Tendulkar indulged his fans on an emotional final day - 15 Nov, 2013 |
উইলো টিভিতে ফ্রি-তে দেখছিলাম ইন্ডিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা। এমনিতেই মন প্রচন্ড খারাপ, তেন্ডুলকরের অবসরের ডিসিশন - তার উপর হতচ্ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ !!! %!@$% এতো কম রান করেছে যে ইন্ডিয়ার সেকেন্ড ইনিংসে ব্যাট করার চান্স, প্রায় নয়, পুরোপুরি শুন্য। পাঁচ দিনের টেস্ট খেলাকে এরা যেন ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করে তিনদিনে নামিয়ে ফেলেছে - সবেতেই ভীষণ তাড়াতাড়ি - যেন US-র লাইফ।
অবশেষে আমাদের সবাইকে দু:খের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে, একগাদা সেন্টু খাইয়ে, ফ্যামিলি নিয়ে এসে নিজেও কেঁদে, শচিন তার ক্রিকেট জীবনের উপর চির-যবনিকা টেনে দিলো। উইকেন্ড শুরুর রাত যেন সোমবার সকালের ভয়ার্ত বেদনা নিয়ে এসে হাজির হলো। এরকম চিনচিনে মন খারাপ ভাব অনেক, অনেকবছর আগে একবার ফীল করেছিলাম, যখন ঝোঁকের মাথায় দেশান্তরী হবার জন্যে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে টাক্সিতে চড়ে বসেছিলাম। কি করে মন ভালো করি, ভাবতে ভাবতে কয়েক যুগ আগেকার মোটা অ্যালবামটা খুলে বোসলাম। অবশেষে পুরানো দিনের বইমেলায়, কলকাতা পুলিশের একটা ছবি দেখে মনটা একটু হালকা হলো। ব্যাপারটা একটু খুলেই বলা যাক - মানে আজকে তো বলারই রাত - এরপর থেকে কার জন্যেই বা আর টিভি খুলে ক্রিকেট দেখবো !!
সময়টা তখন বইমেলার মাস - চারিদিকে নানান রকম নাশকতার সম্ভাবনা। বাজারে জোর খবর 'বইমেলায় বোমা উড়বে' - এই বাজারে এক উইকেন্ডের দুপুরে গিয়েছি বইমেলায় ঘুরতে - একা একাই। জ্যামে দাঁড়িয়ে বাসের মধ্যেই কেটে গেলো ঘন্টা দুয়েক। এরপর টিকিট কেটে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেলো আরও মিনিট চল্লিশেক !! মাথা ক্রমশ: গরম হয়ে উঠেছে। চারিদিকে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। সাদা-পোশাকের, খাকি পোশাকের, ঘোড়ায় চড়া - কতো রকমের পুলিশ - এ কোথায় এলাম রে বাবা! ঢোকার মুখে শুরু হলো জোরকদমে খানা-তল্লাশ। জেনারালি পুলিশী-হ্যারাসে আমি বিব্রত বোধ করিনা। ছাত্রাবস্থায় বিনা টিকিতে ট্রেনভ্রমণের দৌলতে রেল-পুলিশের সাথে আমার যথেষ্ঠ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। কেবল তাদেরকে নয়, বেশিরভাগ কলকাতা পুলিশদেরকেই আমি শুধু 'মামা' নয়, প্রায় আমার হবু 'শ্বশুর-শাশুড়ির' মতো আপনজন বলে মনে করি। কিন্তু সামহাউ আজকের দিনে শরীরটা আমার যুতসই লাগছে না। লাইন দিয়ে শম্মুক গতিতে এগিয়ে চলেছি। দেখি দুটো মোটা, ভুঁড়িওয়ালা পুলিশ ঢোকার গেটে সবার ব্যাগ ভালো করে খুলে, তন্ন তন্ন করে কি সব দেখছে - ওল্টাচ্ছে, ঝাঁকাচ্ছে যেন আমরা ব্যাগে করে ঝুড়ি ঝুড়ি শুঁয়োপোকা নিয়ে ঘুরছি। তাদের ব্যাগ পরীক্ষা করার ভাব-সাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ রাজ্যের পুলিশী-প্রশিক্ষণের কি হাল। অবশেষে আমার টার্ন আসতে তাদের একজন আমার সুন্নি-মার্কা ব্যাকপ্যাকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে হেঁড়ে গলায় বলে উঠলো: 'আভি পু-রো খুলকে দিখাও...' - আর যায় কোথা - ব্রহ্মতালু পর্যন্ত আমার যেন চিড়বিড় করে জ্বলে উঠলো। ব্যাটা বাঙ্গালী হয়ে, বাংলার মাঠে দাঁড়িয়ে, তুই কিনা বাঙ্গালীর সামনেই ভুলভাল হিন্দী কপচাসচ্ছিস !! এত্তো বড়ো তোর আস্পর্ধা! আমি খুব সাবধানে ব্যাগটাকে পিঠ থেকে নামিয়ে, জিপারটা সামান্য একটু খুলে তার হাতে দিলাম। যেই না সেই ব্যাটা মুখ তুলে ব্যাগের ভিতরে দেখতে যাবে, আমি আঁতকে ওঠার ভঙ্গি করে চেঁচিয়ে উঠলাম: "সা-ব-ধা-ন ! ফেটে যাবে !!" - ওমনি পুলিশ দুটোর পিলে চমকে গেলো একেবারে। আর যাই কোথা ! সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে আরো কয়েকটা মুশকো পালোয়ান টাইপের সাদা পুলিশ এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। এর মাঝে কে একজন ফচ-ফচ করে ছবি তুলতে শুরু করে দিলো। আমি, অবস্থা সুবিধের নয় দেখে, হে-হে করে দেঁতো হাসি হেসে মোলায়েম ভাবে বললাম, "দাদা, এইভাবে যে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে দেখছেন, কারো ব্যাগে যদি সত্যি সত্যি ইয়ে, মানে বিস্ফোরক থেকে থাকে, তো সবার আগে আপনিই ধরা খেয়ে যাবেন - মানে ফুটে যাবেন..." --- কিন্তু ভবি কি ভোলবার! তারপর অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে, আইডেন্টিটি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখিয়ে, বাড়ির ফোন নাম্বার, অফিসের ফোন নাম্বার, প্রেমিকার ফোন নাম্বার, আমার চোদ্দ পুরুষের আরও একগাদা ইনফরমেশন নিয়ে, পারলে আমার জামা-প্যান্ট খুলে নাঙ্গা করে দেয় এমন ভাব দেখিয়ে, তবে সে যাত্রায় একরকমে উদ্ধার পেলাম! --- কিন্তু কথা'য় আছে না: 'স্বভাব যায় না মলে' - তাই, কিছুটা দূরে গিয়ে আবার আমি অন্য দিক দিয়ে ঘুরে এলাম। লুকিয়ে লুকিয়ে সেই ব্যাটা দুই পুলিশের ছবি তুলে রাখলাম। ভালোমতোই ডলা খেয়েছি, কিন্তু লক্ষ্য করলাম তারা একটু নার্ভাস হয়ে উঠেছে - আগের সেই পদ্ধতি বাদ দিয়ে তারা আপাতত দূর থেকে সন্দেহজনক ভাবে ব্যাগ পরীক্ষা চালু করেছে, আর মোটামুটি একটু করে দেখেই সব দ্রুত পাস করিয়ে দিচ্ছে !! এখন লাইন ভালো গতিতেই এগুচ্ছে! হু হু বাবা! বললে হবে? সাধে কি বলে "আপনি বাঁচলে বাপের নাম !!"
এবার মনটা একটু ভালো হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে... দেখি ফ্রিজে কিছু আছে কিনা এই বাজারে !!
No comments:
Post a Comment