Wednesday, March 26, 2014

ফরচুন কুকি

লাঞ্চে গিয়েছিলাম খেতে Milpitas-এর এক পপুলার চাইনীজ রেঁস্তরাতে, 'Chili Palace'-এ। শুক্রবারের দুপুরে মারাত্মক ভীড় - টিম লাঞ্চ বলে একসাথে বড়ো টেবিল পাওয়াও বেশ মুস্কিল। প্রায় আধঘন্টা দাঁড়ানোর পর মিললো আমাদের খাবার জায়গা - দুটো টেবিল জোড়া লাগিয়ে একসাথে বসার ব্যবস্থা হলো। চুটিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর এলো সেই মজার মুহূর্তটি - অর্থাৎ 'ফরচুন কুকি' ভাঙার পালা। টিম লাঞ্চে নব্য চালু করা ত্যাঁদড়ামো-রীতি অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেককে তাদের ফরচুন কুকি ভেঙ্গে, সেটার মধ্যে থাকা কাগজে কি মেসেজ লেখা আছে তা জোরে জোরে পড়তে হবে। সব থেকে হাস্যকর এবং অভিনব মেসেজ যে পাবে, তার খাবারের দামের শেয়ার, অন্যেরা শেয়ার করে নেবে !! ভোটাভুটিতে সবথেকে মজার মেসেজটিকে নির্বাচন করা হবে - এবং এক্ষেত্রে আমাদের ম্যানেজার, 'শ্রীনিবাসন'-এর ভুমিকা পালন করার গুরুদায়িত্বটি নেবেন। আমার ভাগ্যে যথারীতি সে রকম ভালো কিছু কখনো হয় না - এবারেও হলো না। কিন্তু আমার ফরচুন কুকি-র মেসেজটা পড়ে আমার নিজেরই বেশ মজা লাগলো - 'Must talk to a forgotten friend to get invaluable advise that may change course of your life...' -এরকম intrigued ধরণের একখানা মেসেজ। এমনিতে অবশ্য আমার বন্ধুদের সংখ্যা খুব বেশী নয় - তার উপরে মুখচোরা বলে অনেকেই আমাকে আন-সোশ্যাল এবং কম-জ্ঞানী বলে সম্মান দিয়ে থাকে। তাই সেরকম ভাবে ধরতে গেলে আমার প্রায় টু-থার্ড বন্ধুরাই দিব্যি চলে আসবে 'ফরগটন' লিস্টে !! কিন্তু ফরচুন কুকি বলে কথা - তাছাড়া জীবনের এই মধ্য পর্যায়ে এসে মাগনা অ্যাডভাইসে জীবনের কোর্স বদলানো মুখের কথা নয়। লোকে কতো পয়সা খরচ করে, লাইফ চেঞ্জের উদ্দেশ্যে shrink-এর কাছে যায় - আর আমি তো প্রায় ফ্রী-তেই বদলানোর সুযোগ পেয়ে যাচ্ছি !! তাই অফিসে ফিরেই ডেস্কে বসে একদম পুরানো দিনের ইমেলগুলোতে চোখ বোলাতে লাগলাম। কোন মহাজ্ঞানী যেন বলে গিয়েছিলেন, “যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন...” - তো, কে বলতে পারে, আজই হয়তো আমার সেই 'হারানো রতন' পাবার দিন !! বিস্তর চিন্তা-ভাবনার পর অবশেষে সিলেক্ট করলাম প্রবাস জীবনের শুরুতেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া এক বিচ্ছু ক্লাসমেটের নাম! একসময় সবার পিছনে লেগে লেগে সে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো - কিন্তু গানের গলাটি ছিলো তার বেশ ভালো। ওই একটা কারণেই তার যাবতীয় বাঁদরামো কিছুটা মুখ বুজে সহ্য করে এসেছিলাম। গলায়-গলায় বন্ধুত্ব না-হলেও, মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য একটা রিলেশান কেমন করে না-জানি গড়ে উঠেছিলো। শেষ কথাবার্তা হয়েছিলো প্রায় বছর-বারো আগে - অর্থাৎ এক যুগ পেরিয়ে গেছে আমাদের নিশ্চুপতার পালা !!

ফেসবুক-এ সার্চ করে তার পাত্তা যোগাড় করতে খুব বেশী সময় লাগলো না - ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট-এর জবাব পেতে লাগলো আরো ঘন্টা দুয়েক !! তার মিনিট দশেকের মধ্যে আমার সেল ফোনে পিড়িং পিড়িং টোনে ভেসে এলো তার গা-জ্বলানো কন্ঠস্বর: “কি রে হতচ্ছাড়া, বেঁচে আছিস এখনো?” - এরপর চললো অনর্গল, অবান্তর, লাগামহীন কথাবার্তা - অনেকটা আনাড়ি চাইনিজদের পিং-পং খেলার ঢংয়েই !! স্কুল-জীবন হয়ে কলেজ জীবন, বান্ধবী থেকে বৌ, ইন্ডিয়ান রাজনীতি ঘুরে ক্রিকেট, শ্রীনিবাসন থেকে সাউথ সিটি, ছেলে-পিলে, বাবা-মা, সুগার-কোলেস্টেরল - আরো যত্তসব হাবিজাবি কথার পর হঠাৎই খেয়াল হলো: আরে!! সে ব্যাটা কোথায় থাকে আর কি কাজ করে, সেই দরকারী কথাটাই তো জিজ্ঞাসা করা হয়ে ওঠেনি !! তাই প্রশ্ন করলাম, “এখন কোথায় আছিস আর কি কাজ করছিস ?” - তার দেওয়া উত্তরে প্রায় ২২০ ভোল্টেজের কারেন্ট শক খেয়ে চমকে উঠলাম - জানলাম গত দেড়বছর ধরে সে আর আমি একই কোম্পানিতে কাজ করে চলেছি - ITতেই !!! সে এখন আছে অ্যামেরিকার-ই East Coast-এর দিকে - কিন্তু যে অ্যান্ড্রয়েড-প্রজেক্টে সে কাজ করছে তার সব কিছুই কন্ট্রোল হয় এখান থেকে - অর্থাৎআমার ফ্লোরের অন্যদিকে থাকা এক প্রজেক্ট টিমের দ্বারা !! সুতরাং রেসিডেন্সিয়াল ডিস্ট্যানসটুকু বাদ দিলে সে আর আমি এক ফ্লোরেই কাজ করে যাচ্ছি। সে আছে ফোর্থ ফ্লোরের নর্থ-এর দিকে, আর আমি সাউথের দিকে - লে হালুয়া !!! TGIF (Thank God It Was Friday)....


No comments:

Post a Comment