Monday, October 6, 2014

“রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে, একি তব হরি খেলা”





টিন-এজেড বয়সের মাঝামাঝি পর্যন্তও “বড়ো কত্তা” অর্থাৎ শচীনদেব বর্মণের গানকে ভাবতাম আদ্যিকালের, বুড়োটে লোকেদের গান - কি নাঁকি নাঁকি গলায় খালি “ইঁয়া, ইঁয়া, ইঁয়া...” করে যান। কিন্তু ও মা! সেই বুড়োর গানে যে এতো প্রেমরস লুকিয়ে ছিলো তা আগে কে জানতো !! সেকেন্ডারী এক্সজামের প্রিপারেশন নেবো কি, মন যেন বিদ্রোহ করে বলে উঠলো “ওরে! ভালোবাসা না থাকলে তোদের কোনওদিন কিস্যুটি হবে না, এটা নিশ্চিত করে জেনে রাখ। ভালোবাসা ছাড়া কোনও গতি নেই-রে! কোন-ও উপায় নেই!! কিসের এতো তোদের হিসেবের জীবন, কিসেরই বা এতো লক্ষ্য - খালি এগিয়ে চলা, আর এগিয়ে চলা !! শুধু ভালোবেসে যা রে, আচ্ছা-সে ভালোবেসে যা...” 


শীতের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে - ঠিক সন্ধ্যের মুখে চিরাচরিত লোডশেডিংয়ের আঁধার। সুগন্ধি চেসমী গ্লিসারিন দিয়ে স্নান করা শরীরে ভালো করে সাদা শালটা জড়িয়ে, ঠোঁটে “সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রীম, বোরোলীন” লাগিয়ে, কষে জানুয়ারীর শীত উপভোগ করে চলেছি। বাইরে টুপটাপ ঝরে চলেছে শীত। হাতে রয়েছে আধ-খাওয়া চায়ের কাপ, কোলে বিরাজমান সঞ্জীব চ্যাটুজ্জ্যের 'লোটাকম্বল'-এর প্রথম পর্ব, অসহায় ভাবে ভাঁজ হয়ে পড়ে। মন প্রেমরসে একেবারে যাকে বলে টই-টম্বুর। কোন দূরের একটা বাড়ির রেডিও থেকে লোডশেডিং ভেদ করে, তুলোর মতো দুলতে দুলতে ভেসে এলো শচীন-কত্তার নাঁকি কন্ঠের মায়াবী সুর: “মুক্তা যেমন শুক্তির বুকে তেমনি আমাতে তুমি, আমার পরাণে প্রেমের বিন্দু তুমি শুধু তুমি...” - ব্যাস ! হয়ে গেলো - লোডশেডিং আর আমাকে একা থাকতে দিলো না। কল্পনার প্রেমিকার মুখ বুকে পোস্টার করে, ভালবাসার সাগরে ভেসে গিয়ে, আবেগে দু'চোখ বুজে আমিও কূঁই কূঁই করে তাঁর সাথে গলা মিলিয়ে উঠলাম: “তুমিই, শু-ধু তুমি...” - এমন সময়ে হঠাৎই জ্বলে উঠলো ঘরের টিউবলাইট, আর তার সাথে সাথে দেখলাম আমার পিতৃদেব গম্ভীর চালে ঘরে প্রবেশ করছেন, কঠিন মতো একটা মুখ নিয়ে। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো - প্রেমরস মুহুর্তেই হাওয়া চৈত্রের খাঁ-খাঁ দুপুরে। হাত থেকে বই গেলো পড়ে অসাড়ে। কি করি, কি করি, ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত স্কুলের ইংলিশ-গ্রাম্যার টিচার, শ্যামলবাবুর ময়রা-মুখ আর তাঁর স্নেহময়ী কানমলার রেওয়াজি স্বাদ মনে এনে, সঙ্গে সঙ্গে সুরের হেরফের ঘটিয়ে করুণ মুখে গুনগুনিয়ে উঠলাম: “তোমায় আমায় মিলে, এমনি বহে ধারা... তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা...” - পিতৃদেব কিছুক্ষণমাত্র সময় নিলেন ব্যাপারটা কি ঘটে চলেছে তা অনুধাবনে। তার পর “উঁহুমমম” শব্দের একটা বিকট গলা-খাঁকারি দিয়ে ঘরের খোলা জানালাটা বন্ধ করতে এগিয়ে গেলেন। মুহুর্তেই নিজেকে যেন মনে হলো একটা 'মুষিক' মাত্র !! - “যাক বাব্বা ! আলো এসে গেছে, বাঁচা গেছে - যাই এবার পড়তে বসি গিয়ে...” বলে আমি হন্তদন্ত করে উঠে পড়লাম...



No comments:

Post a Comment