এক একটা পুজো যায়, আর জীবনের আয়ু থেকে এক একটা বছর সাদা মেঘের মেলায় ভাসতে ভাসতে অনন্তে মিশে যায়। আমাদের মাথার চুলে পাক ধরে, দাঁতের গোড়া নড়ে ওঠে, কপালে আরেকটা নতুন রেখা যোগ হয়। চোখের চশমার কাঁচ বদল হয়, কারো বা পরচুলা ঝোলে মশারির পাশে পেরেকে। মহালয়ার শেষ রাতে শুরু হয়ে যায় 'স্মৃতি তুমি বেদনা' - তারপর বিসর্জনের গঙ্গায় দেবী প্রতিমার সঙ্গে ভাসান হয়ে যায় জীবনের আরেকটা দায়সারা বছর, অসফল তিনশো পঁয়ষট্টিটা দিন।
পুজো এলো এবং চলে গেলো, যেমন চিরকাল আসে যায়। ঝড়ের মতো আসে, তার চেয়েও দ্রুত বেগে চলে যায়। নবমী নিশি বড়ো দ্রুত অতিক্রান্ত হয়। অনেকদিন আগে এক আধুনিক কবি লিখেছিলেন ---
“বোধনের ঢুলি বাজাবেই শেষে, বিসর্জনের বাজনা
থাক থাক সে তো আজ না,
সে তো আজ নয়, আজ না...”
দেবী বিসর্জন... |
কিন্তু থাক থাক করে কিছুই কি ধরে রাখা যায়? ঢাকের শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যায়। শুন্য মন্ডপে সঙ্গীহীন ক্ষীণ প্রদীপশিখা স্মরণ করিয়ে দেয় গতদিনের উৎসব রজনীর কথা। বাতাসে আরেকটু হিমেল ভাব, শরতের শেষ শেফালী ঝরে পড়ে অনাদরে ধুলোভরা রাস্তায়। পুরানো গৃহস্থ বাড়ির ছাদের শিখরে জ্বলে ওঠে কোন সনাতন পৃথিবীর অমল আকাশ প্রদীপ...
স্মৃতি, তুমি বেদনা |
এক বিদেশী কবরখানায় কোন এক সমাধিফলকে লেখা দেখেছিলাম: "I know this will happen, but it is too quick to think" -- প্রত্যেকবার পুজোর পরে ওই সমাধিফলকের কথা আমার মনে পড়ে যায় - জানতাম আরেকটা পুজো ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সেটা ভাবিনি। তবুও দিন আসে, দিন যায় - বিষন্ন মনটাকে সোজা করে নিই আগামী বছরের পুজার প্রত্যাশায়। আবার শুরু হয় অপেক্ষার পালা, নতুন এক উদ্যমে। পুজোর পর যথারীতি যেমন ছিলাম দ্রুত তেমন অবস্থায় প্রত্যাবর্তন। কোনো প্রভেদ হয়না, শুধু দিন আরেকটু ছোট, রাত আরেকটু ঠান্ডা - কলকাতার জীবনের তার একটু নিচুতে বাঁধা ....
A S A DH A R O N !
ReplyDelete