Sunday, May 10, 2015

Old MacDonald Had A Farm...

 চারি দিকে এখন সকাল –
রোদের নরম রঙ শিশুর গালের মতো লাল !
মাঠের ঘাসের পরে শৈশবের ঘ্রাণ –
পাড়াগাঁর পথে ক্ষান্ত উৎসবের পড়েছে আহ্বান !
- জীবনানন্দ দাশ  



'Urban  Farming', অর্থাৎ কিনা 'শহুরে চাষবাস' কথাটা বেশ কিছুকাল হলো খুব শোনা যাচ্ছে - বিশেষ করে এদেশে।  'এমা প্রুশ' (Emma Prusch) ছিলেন সেই ধরনের এক 'হুরে চাষী'। জন্মসুত্রে (১৮৭৬) তিনি ছিলেন জার্মান দম্পতি উইলিয়াম এবং কেট প্রুশ-এর একমাত্র কন্যা সন্তান। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকের থেকে তাঁরা "সান হোসে" শহরেই বসবাস শুরু করেছিলেন।  অবশ্য সেই সময়কার 'সান হোসে' শহরের সাথে আজকের এই ঝাঁ চকচকে 'সান হোসে'-র কোনো রকম ভাবে তুলনা টানা অসম্ভব। ফার্মল্যান্ড, আর অর্চার্ডে ভরে থাকা 'সান হোসে' শহরটা যে পরবর্তীকালে 
The Prusch Farm Homestead  
ক্যালিফোর্নিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে দাঁড়াবে, তা হয়তো 
তাঁরা স্বপ্নেও কল্পনা করে যান নি। কিন্তু এখন ভাবলেও অবাক লাগে যে বিগত কয়েক যুগ ধরে চলতে থাকা "সান হোসে" শহরের অস্বাভাবিক গতিতে উন্নয়ন ও বিস্তৃতির যাঁতাকলের মধ্যে পড়েও 'এমা প্রুশ'-এর ফার্ম কিন্তু ঠিক আগের মতোই একইরকম থেকে গেছে। তাঁদের সেই ফার্ম হাউস আজ 'পার্ক হাউস'-এ পরিণত হয়েছে। তাঁদের অতি আদরের গোলাঘর বা শস্যাগারটিকে সম্প্রতি পুন:সংস্করণ করা হয়েছে। 

সাতচল্লিশ (৪৭) একর জায়গা জুড়ে থাকা এখনকার এই ফার্ম পার্কটা সেই সময়ে 'এমা প্রুশ'-দের ডেয়ারী ফার্ম ছিলো। অবিবাহিত ও নি:সন্তান 'এমা' ১৯৬২ সালে এই বিশাল সম্পত্তিটি "সান হোসে" শহরকে উইল করে দান করে যান - শর্ত ছিলো শুধু একটাই, যে ফার্মটিকে ঠিক একইরকম ভাবে সংরক্ষিত করে রাখতে হবে - অর্থাৎ ফার্ম ও পার্ক-টিকে কোনরকমভাবে ভেঙেচুরে বিল্ডিং কমপ্লেক্স বা অন্য কিছুতে রুপান্তরিত করা যাবে না। তাঁর 'অবিচুয়ারী'-তে তাই পরিস্কার করে বলা ছিলো যে: "Emma’s wishes were to have a model farm to remind future generations that their fathers sprang from the land and lived a country life before subdivisions took over the valley..."
Emma Prusch (1876-1969)
'এমা' অবশ্য তাঁর উইলে সব মিলিয়ে সাড়ে ছিয়াশি একর জমি দান করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার থেকে প্রায় ২৮ একর জমি নিয়ে তৎকালীন শহর-কর্তৃপক্ষ ইন্টারস্টেট-২৮০ (I-280) রাস্তা তৈরী করেছিলো, যেটা তাঁর ফার্মের ঠিক পিছন দিক দিয়ে চলে গেছে। পরবর্তী কালে আরও এগারো (১১) একর জমি নিয়ে একটি বেসবল মাঠ তৈরী করা হয়েছে, "Police Athletic League"-এর জন্যে। বাদবাকি পড়ে থাকা সাতচল্লিশ (৪৭) একর জায়গা জুড়ে বেঁচে রয়েছে আজকের এই চিরসবুজ "এমা প্রুশ' ফার্ম অ্যান্ড পার্ক"

এপ্রিল শুরু হতেই এদেশে আস্তে আস্তে গরম পড়তে শুরু করে - কাব্যিক ভাষায় সবাই বলতে থাকে যে, Spring is in Full Swing out here !! তো সেরকমই এক এপ্রিলের উইকেন্ডে কিছুটা হঠাৎ করেই বেড়িয়ে পড়লাম "এমা প্রুশ ফার্ম"-এর দিকে।  নেট ঘেঁটে দেখলাম যে সবাই পার্কটার বেশ সুখ্যাতিই করেছে - বিশেষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা, আর নির্জনতা নিয়ে সবাই ভালো ভালো কথা বলেছে। তার উপর এই পার্কের মধ্যেই রাখা আছে বেশ কিছু পপুলার জীবজন্তু। সুতরাং 'ওল্ড ম্যাকডোনাল্ড' ফার্মে যাবি নাকি, বলতেই আদি একেবারে এক পায়ে খাড়া। 

I-280 South ধরে এগিয়ে I-680-তে পড়ার ঠিক আগে, King Road-এ  exit নিয়ে একটু খানি এগুলেই, ডান হাতে পড়বে "এমা প্রুশ ফার্ম"...
I-280 South

এই পার্কের কোনো এন্ট্রান্স ফী নেই, পার্কিং ফী-ও নেই - গাড়ি পার্ক করার জন্যে রয়েছে অফুরন্ত জায়গা। মোটামুটি ছায়া দেখে একটা জায়গায় গাড়িটা পার্কিং করে, খোলা গলায়  'এমা আমার, এমা ওগো, এমায় ভুবন ভরা...' গান গাইতে গাইতে আমরা তিনজনে মিলে পার্কে ঢুকলাম। কিন্তু ঢুকেই একদল মোরগদের সম্মিলিত প্রতিবাদী কোঁকর-কোঁ কন্ঠে বুঝলাম তাদের প্র-প্র-প্রপিতামহীকে নিয়ে গান গাওয়াটা তারা কোনোমতেই ভালোভাবে নিচ্ছে না !! 
> অ্যাই, তুই কে রে ?  
>> ওই!! তুই কে?      

"Hey! don't bug me - see, I'm busy..."
কি নাদা রে তুই - ভালো করে চলতেও পারছিস না !!
Treat Dispenser 
মাত্র ২৫ সেন্ট-এর বিনিময়ে এখানে 'Treat  Dispenser' থেকে খাবার কিনে হাঁস-মুরগিদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। অনেক বাচ্চাই দেখলাম সেটাতে খুবই উৎসাহী। 

অ্যাতো বিশাল, অথচ এরকম পরিষ্কার আর সবুজ ঘাসে ভর্তি পার্ক আমি এর আগে কবে দেখেছি তা মনে করে উঠতে পারলাম না। মোরগের ঝাঁক পেরুতেই দেখলাম বিশাল দুটো মেটালের ট্র্যাক্টর রাখা আছে। 'ট্র্যাক্টর' এদেশের বাচ্চারা অসম্ভব পছন্দ করে - ঠিক কি কারণে করে তা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।  হয়তো আদির কাছ থেকে কোনো একদিন জেনে নিতে পারবো !
Metal Tractor 
নানান রকমের মুরগি ও মোরগের সাথে সাথে বেশ কিছু পেল্লায় সাইজের 'হাঁস-হাঁসিনী'-দেরও দেখা মিললো। কিন্তু ময়ুর তেমন চোখে পড়লো না। অবশ্য বেশিক্ষণ দেখার সময় পাইনি, কারণ এর মধ্যেই আদি বিশাল প্লে-হাউসে স্লাইডিং করার জন্যে উঠে পড়েছে। ছোটো-বড়ো মিলিয়ে বেশ কিছু বাচ্চা সেই প্লে-হাউস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্লে-হাউসটায় তিনদিক দিয়ে ঢোকা যায় - নানান রকমের ক্লাইম্বিং অব্সট্যাকল করা আছে - সুতরাং আর কি চাই !! প্লে-হাউসের পাশেই রয়েছে চারটে সুইং, অর্থাৎ দোলনা - দুটো ছোটোদের জন্য, আর দুটো বড়োদের। আদি কিছুক্ষণ সেই দোলনায় চড়ার পর একবার দুম করে পড়ে গেলো ! নীচে কাঠের গুঁড়োর চিপস দেওয়া থাকায় ঝামেলা কিছু হয়নি। 
Giant Playhouse 
লোকাল ডে-ক্যাম্প, প্রি-স্কুলের ফিল্ড ট্রিপ, আর কিন্ডারগার্টেন ক্লাসের জন্যে "এমা প্রুশ ফার্ম" বেশ পপুলার। গোটা দশ-পনেরোর মতো পিকনিক স্পটও রয়েছে। সবগুলোই লোকজন দখল করে নিয়ে রান্না-বান্না শুরু করে দিয়েছে। কয়েকটাতে দেখলাম বেলুন-ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে, জোরদার সমারোহে বার্থ-ডে পার্টির অনুষ্ঠানও হচ্ছে।  কেউ কেউ আবার মাঠের মাঝে বড়ো তাঁবু খাটিয়েও পিকনিক করছে - সব মিলিয়ে চারিদিকে এক ঝঞ্ঝাটহীন, আনন্দের আবহাওয়া। বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে বাচ্চারা এদিক-ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে - কেউ বেসবল ব্যাট ঘোরাচ্ছে, কেউ সাইক্লিং করছে - একদল ছেলেরা দেখলাম ফুটবল খেলছে। ঘুড়ি ওড়াতেও কয়েকজনকে দেখলাম, তবে আমাদের দেশের ঘুড়ি নয়। বেশ কিছুক্ষণ ধরে আদির স্লাইডিং পর্ব শেষ হবার পর আমরা চললাম 'petting zoo'-এর দিকে। এখানে অবশ্য toddler-দের ভীড়ই বেশি।  
এখানে গরু, ছাগল, ভেড়া, পেট-ফোলা শুয়োর, টার্কি, খরগোশ, আরো নানান রকমের জীবজন্তু রয়েছে। 
Baby Pigs
কচ্ছপের দল  - রোদ পোয়াচ্ছে 
মোরগ -হাঁস-শুয়োর - একই ছাদের তলায়
হাঁস ও হাঁসিনী
বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ, আদি অকৃত্রিম রামছাগল 
টার্কি 
মিনিট বিশেক কাটার পর আমাদের নাক যখন ওখানকার বাসিন্দাদের হিসি-পুপুর ঝাঁঝালো গন্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করলো, তখন আমরা বেরিয়ে এসে, একটা ছাওয়াওলা গাছের নিচে বসে একটু বিশ্রাম করে নিলাম। সঙ্গে কিছু খাবার-দাবার আর জল আনলে বেশ হতো, কিন্তু আনা হয়ে ওঠেনি। খোলা আকাশের নিচে সটান শুয়ে থাকার সময়, বা সুযোগ খুব একটা মেলে না - সেটাই বা কম পাওনা কি !!
আকাশ, আরও আকাশ...

হাওয়া-কল...
বিশ্রাম শেষে আমরা চললাম এখানকার বিখ্যাত "International Rare Fruit Orchard"-এর দিকে। নানান দেশের বিখ্যাত কিছু ফলের গাছ করা হয়েছে এখানে - এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আবার হাইব্রিডও।

ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি দেখলাম এক ধরনের সাইট্রাস ফ্রুট, পোশাকি নাম 'Buddha's Hand Citron', বা 'Lemon with Fingers'...
Buddha's Hand Citron
তথ্য অনুযায়ী এই অর্চার্ডে প্রায় ৫৭টি বিভিন্ন জাতের, ৮৫টি ফলের গাছ রয়েছে - বেশ কিছু গাছের আবার নাম লেখা নেই। এদের মধ্যে 'স্ট্রবেরী', 'পমিগ্রান্ট' আর 'অ্যাভোগাডো' ফলগাছ আমি এই প্রথম স্বচক্ষে দেখলাম। 
Strawberry Tree

Pomegranate Tree
Baby Pomegranate 
Avocado Tree 
Pear Guava (Mexican) Tree
Strawberry Guava (Brazil) Tree
অবশেষে ডুমুর (Tiger Fig) গাছের দেখাও মিললো...
হ্যাঁ, কলাগাছও এদেশে বিরল - সুতরাং অবশ্যই দ্রষ্ট্রব্য...
বেশিরভাগ ফলগাছেরই উচ্চতা বেশ কম, যাতে লোকেরা হাত বাড়িয়ে পাড়তে পারে, তবে সব গাছ থেকে ফল পাড়ার নিয়ম নেই। পিকনিক পার্টিদের তুলনায় অর্চার্ড ঘুরে-ফিরে দেখার লোকের সংখ্যা কিন্তু বেশ কম। 

এই পার্কে দুটো কম্যুনিটি গার্ডেন রয়েছে - যেখানে স্থানীয় লোকজন (বেশিরভাগই মেক্সিকান) যাদের নিজস্ব কোনো জমি-জমা নেই, তারা নিজেদের খুশিমতো ফল-সব্জিও চাষ করতে পারে। প্রায় ছয় (৬) একর জায়গা জুড়ে এই ধরনের নন-প্রফিট চাষবাস চলে। যে'সব ফ্রেশ ফল আর সব্জি উৎপাদিত হয়, তা বেশিরভাগই দেওয়া হয়ে থাকে স্থানীয় লো-ইনকাম ফ্যামিলিদেরকে। এছাড়া নিয়ম করে এখানে 'workshop' করা হয় - একটা Farmers Market Stand-ও রয়েছে এখানে। 

দেখতে দেখতে ঘন্টা তিনেক কেটে গেলো - ক্ষিদেয় পেটে কুঁই-কুঁই ডাক শুরু হওয়ায় আমরা ফেরার পথ ধরলাম। আদি যথারীতি গাঁইগুঁই করতে লাগলো, আবারও স্লাইডে ওঠার জন্যে। 'কালই আবার ফিরে আসবো' গোছের কিছু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, ওকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আমরা পার্কিং লটের দিকে রওনা হলাম। এখন দেখলাম পার্কিং লটটা প্রায় পুরোটাই ভ'রে গেছে। 
Bye, Bye !!
While returning we felt so grateful that Emma really had the foresight to set this land aside, and surely if she were to walk through the grounds today, she would be very proud of what remains. Though I'm sure she would be astounded at what has grown up around the farm - malls, high rising buildings, freeways, busy streets....

Even in the 21st Century this park remains, and affords the public, especially children, an opportunity to enjoy the property she cherished, as they learn about growing vegetables, or raising farm animals, and the farm has lots of animals to interact with. In the midst of all the city chaos it’s easy to forget for a moment where you are...

Thanks to Emma Prusch this wonderful piece of South Bay farming history has escaped further development, and provides a glimpse of San José’s farming past, just as she hoped. Wish this park keeps on providing such unique opportunity for the kids, the way it used to be, just as Emma had wished long, long time ago.
~ ~ ~ ~ ~ ~ ~

ফেরার পথে আমরা Eastridge Mall-এর Chili's রেস্তুরাঁতে ভোজন পর্বটা সেরে নিলাম... 
স্ন্যাক্স-এ নেওয়া 'Crispy Cheddar Bites' দেখা গেলো আদির খুবই পছন্দের !!
Chilis @ 2185 Eastridge Loop, San Jose, CA 95122

~ ~ ~ ~ ~ ~ ~

এই শান্ত, নির্জন পার্কে আবারও একদিন ফিরে আসার ইচ্ছা মনেতে পুষে আমরা বাড়ির দিকে ফিরে চললাম...
I-280 North...
ফেরার পথে দেখলাম I-280-তে বেশ বড়সড়ো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, যার জন্যে মিনিট দশেক আমাদেরকে ঘন্টায় পাঁচ মাইল স্পীডে চলতে হলো। তবে এছাড়া আর কোনো ঝামেলায় ভাগ্যবশত: আমাদের পড়তে হয়নি। 



2 comments:

  1. Refreshing write up - thanks for the nice pictures.

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর !! অনেক ধন্যবাদ

    ReplyDelete