কিছুকিছু গানের কথা শুনে মনে হয় এগুলো বোধহয় শুধু কবিতা হয়ে থাকলেই ভালো হতো, আবার কিছু কিছু কবিতা পড়ে মনে হয় হায়রে, যদি কোনো ভালো সুরকার এদেরকে খুঁজে পেতো তাহলে হয়তো আরও কিছু ভালো গান আমরা পেয়ে যেতাম...
এই ব্লগ-এ সেরকম বেশ কিছু কবিতা, আর কিছু না-ঠিক-কবিতা-না-ঠিক-গান তুলে ধরলাম ।
কিছু কিছু কবি/গীতিকারের নাম জানা - আর কিছু কিচ্ছু অজানা - কিম্বা Guess করে নিতে হবে !!
কিছু রং দিও
শিল্পী - দেবব্রত বিশ্বাস
কথা এবং সুর: অনাথ বন্ধু দাস
কিছু রং দিও রৌদ্রের আর আকাশের
ছল ছল দীঘি সাগরে সহাস পান্নার,
রং দিও কিছু অঘ্রাণে রোদে মাঠে মাঘে সোনা মাখবার।
কিছু গান দিও মুর্শিদা আর বাউলের
হাতুড়ির ও শাবলের কান্নার -
আহা, গান দিও কিছু নিকানো দাওয়ায়
সোনা রং ধান ভানবার -
ছল ছল দীঘি সাগরে সহাস পান্নার,
রং দিও কিছু অঘ্রাণে রোদে মাঠে মাঘে সোনা মাখবার।
কিছু সুখ দিও প্রিয়ার দু'চোখে স্বপ্নের,
দামাল শিশুর আলো-ছায়া-হাসি কান্নার -
আহা, সুখ দিও কিছু দুরন্ত দিনে
কাঁধে কাঁধ পাশে রাখবার -
ছল ছল দীঘি সাগরে সহাস পান্নার,
রং দিও কিছু অঘ্রাণে রোদে মাঠে মাঘে সোনা মাখবার -
কিছু রং দিও রৌদ্রের আর নীল আকাশের..,
আমি তো ছিলাম বেশ নিজের ছন্দে
সকালের রোদে আর মাটির গন্ধে,
জ্যৈষ্ঠের তাপে আর শ্রাবণের জলে
সবুজ শ্যাওলা ঘেরা দীঘির আকালে,
কোথাও ছিলেনা তুমি, কেন তুমি এলে ?
কেন গান এনে দিলে,
কেন এনে দিলে ?
আমি তো ছিলাম বেশ নিজের খেয়ালে
লিখিনি কারুর নাম ঘরের দেয়ালে,
লেখা শুধু স্মরলিপি মনের পাতায়
কথা আর সুরে ভরা গানের খাতায়,
কখনো তোমার নাম ছিলো না কোথাও
তাই কি লিখিনি গান আজও একটাও ?
আমি তো ছিলাম বেশ নিজের জগতে
আনাগোনা ছিল শুধু চেনা জানা পথে,
খেলার সাথীর হাতে হাত রেখে খেলা
খেলতে খেলতে কেটে গেলো ছেলেবেলা,
এখন হঠাৎ কেন আনমনে ভাবি
এসেছে অবাক করা জীবনের দাবী।
তুমি কি বোঝনা কেন সুর আসে বুকে
আমার গানের ছোঁয়া দুঃখে ও সুখে,
ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় কাছে আসে দুটি মন
ভালোবাসা গান হয়ে আসেই তখন।
সে খবর রটে যায় হাওয়ার সুবাসে
আকুল ফাগুনে আর চৈত্রের মাসে,
কোথাও ছিলেনা তুমি, কেন তুমি এলে ?
কেন গান এনে দিলে, কেন এনে দিলে ?
[ Life is full with a series of "perhaps", "if", "could-have" & "would-have". Too bad God didn't give us any control to re-start it from scratch, like a "computer reboot"...]
না'হয় আজকে আরও একটু থেকে গেলে
সপ্ত ডিঙ্গায় হাসি কাঁদি
প্রহর গুনিয়া ধীরে ধীরে...
এই যে দুয়ারে আমার আসে দিন, আসে আঁধার
এখানে জীবনপারে চলেছে নিয়ত খেলা,
এই আছি, এই তো নেই,
শুধু চাহি পিছু ফিরে ফিরে...
সপ্ত সুরের ছোঁয়ায় রামধনু আকাশ সীমায়,
সাতটি রঙের রাগে গানের শিখা যে জাগে
তার আলো তার-ই ছায়া
পড়ে শুধু জীবনের নীড়ে...
একটা ছেলে মনের আঙ্গিনাতে ধীর পায়েতে এক্কা দোক্কা খেলে -
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে |
আমি তো বেশ ছিলাম চুপিসাড়ে
ছোট্ট মেয়ে সেজে একলা কোণে,
সবুজ বনে নীলচে আলো জ্বেলে
স্বপ্ন ভেজা মাটিতে পা ফেলে -
সেই ছেলেটা হঠাৎ এলো মনে,
সেই ছেলেটা হঠাৎ এলো মনে |
ছোট্ট আমি, দুষ্টু আমি সে যে,
কেমন যেন হলাম জড়োসড়,
আকাশ ভরা তারার আলো দেখে
বৃষ্টি ভেজা মাটিতে পা রেখে |
বুক ভরা আবেগটুকু দেখে
হঠাৎ করে হয়ে গেলেম বড়ো...
বন পাহাড়ী ঝর্না বৃষ্টি ফেলে
আমায় বাসলো ভালো সেই ছেলে ,
আমায় বাসলো ভালো সেই ছেলে ||
অপ্রস্তুত তুমি বললে: 'না না না, এখনো করিনি'
হাসতে হাসতে জানতে চাওয়া 'নিশ্চয় প্রেম করছেন?'
একবাক্যেই উত্তর: 'রাত্রে ফোন করেন'।
কিছু কিছু কবি/গীতিকারের নাম জানা - আর কিছু কিচ্ছু অজানা - কিম্বা Guess করে নিতে হবে !!
কিছু রং দিও
শিল্পী - দেবব্রত বিশ্বাস
কথা এবং সুর: অনাথ বন্ধু দাস
কিছু রং দিও রৌদ্রের আর আকাশের
ছল ছল দীঘি সাগরে সহাস পান্নার,
রং দিও কিছু অঘ্রাণে রোদে মাঠে মাঘে সোনা মাখবার।
কিছু গান দিও মুর্শিদা আর বাউলের
হাতুড়ির ও শাবলের কান্নার -
আহা, গান দিও কিছু নিকানো দাওয়ায়
সোনা রং ধান ভানবার -
ছল ছল দীঘি সাগরে সহাস পান্নার,
রং দিও কিছু অঘ্রাণে রোদে মাঠে মাঘে সোনা মাখবার।
কিছু সুখ দিও প্রিয়ার দু'চোখে স্বপ্নের,
দামাল শিশুর আলো-ছায়া-হাসি কান্নার -
আহা, সুখ দিও কিছু দুরন্ত দিনে
কাঁধে কাঁধ পাশে রাখবার -
ছল ছল দীঘি সাগরে সহাস পান্নার,
রং দিও কিছু অঘ্রাণে রোদে মাঠে মাঘে সোনা মাখবার -
কিছু রং দিও রৌদ্রের আর নীল আকাশের..,
ছায়াছবি :সেদিন চৈত্রমাস (১৯৯৭)
শিল্পী: স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, নচিকেতা চক্রবর্তী
গীতিকার & সুরকার: কবীর সুমন
শিল্পী: স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, নচিকেতা চক্রবর্তী
গীতিকার & সুরকার: কবীর সুমন
আমি তো ছিলাম বেশ নিজের ছন্দে
সকালের রোদে আর মাটির গন্ধে,
জ্যৈষ্ঠের তাপে আর শ্রাবণের জলে
সবুজ শ্যাওলা ঘেরা দীঘির আকালে,
কোথাও ছিলেনা তুমি, কেন তুমি এলে ?
কেন গান এনে দিলে,
কেন এনে দিলে ?
আমি তো ছিলাম বেশ নিজের খেয়ালে
লিখিনি কারুর নাম ঘরের দেয়ালে,
লেখা শুধু স্মরলিপি মনের পাতায়
কথা আর সুরে ভরা গানের খাতায়,
কখনো তোমার নাম ছিলো না কোথাও
তাই কি লিখিনি গান আজও একটাও ?
আমি তো ছিলাম বেশ নিজের জগতে
আনাগোনা ছিল শুধু চেনা জানা পথে,
খেলার সাথীর হাতে হাত রেখে খেলা
খেলতে খেলতে কেটে গেলো ছেলেবেলা,
এখন হঠাৎ কেন আনমনে ভাবি
এসেছে অবাক করা জীবনের দাবী।
তুমি কি বোঝনা কেন সুর আসে বুকে
আমার গানের ছোঁয়া দুঃখে ও সুখে,
ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় কাছে আসে দুটি মন
ভালোবাসা গান হয়ে আসেই তখন।
সে খবর রটে যায় হাওয়ার সুবাসে
আকুল ফাগুনে আর চৈত্রের মাসে,
কোথাও ছিলেনা তুমি, কেন তুমি এলে ?
কেন গান এনে দিলে, কেন এনে দিলে ?
একটি পুরনো বাংলা গান
কবি : জয় গোস্বামী
সংকলন: তোমাকে আশ্চর্য্যময়ী
কবি : জয় গোস্বামী
সংকলন: তোমাকে আশ্চর্য্যময়ী
তার কাছে ঋণ আছে একটি পুরনো বাংলা গান
উঠে যাই, ছাদে বসি, অদূরে লন্ঠনমাত্র জ্বলে
সে বসেছে, পা গুটিয়ে, মাটিতে হাতের ভর রাখা
আমারই স্বভাবদোষে হাত ফসকে পরে গেলো প্রাণ
আজ সব অসম্ভব। আকাশও আকাশ দিয়ে ঢাকা।
লন্ঠন নিভেছে। শুধু দূরে ওই বাড়ির ওপারে
উঠে এলো কালো চাঁদ, সেদিনের সাক্ষ্য ও প্রমাণ...
এই ছাদে গান ছিল। একটি পুরনো বাংলা গান।
উঠে যাই, ছাদে বসি, অদূরে লন্ঠনমাত্র জ্বলে
সে বসেছে, পা গুটিয়ে, মাটিতে হাতের ভর রাখা
আমারই স্বভাবদোষে হাত ফসকে পরে গেলো প্রাণ
আজ সব অসম্ভব। আকাশও আকাশ দিয়ে ঢাকা।
লন্ঠন নিভেছে। শুধু দূরে ওই বাড়ির ওপারে
উঠে এলো কালো চাঁদ, সেদিনের সাক্ষ্য ও প্রমাণ...
এই ছাদে গান ছিল। একটি পুরনো বাংলা গান।
না'হয়
না'হয় আজকে আরও একটু থেকে গেলে
এই বৃষ্টি বৃষ্টি ঝরা রাতে,
এই মিষ্টি মিষ্টি ভরা রাতে
না'হয় আজকে আরও একটু থেকে গেলে -
অনেক কাজের দিন তো আছেই সারা জীবনে
অনেক সময় চলে গেছে,
চলে গেছে বহু কারণে -
কিছুটা সময় নয় ইচ্ছা করেই আমার হাতেই তুলে দিলে ।
শুধু এই টুকু ছোট অনুরোধ,
তুমি রাখতে পারোতো অনায়াসে
কি করে বোঝাই বলো আমি আছি কত আশ্বাসে -
এখন অনেক স্বপ্ন তোমার চোখেও রয়েছে
আমার কথাও আছে বাকি, কতো-ই বা বলা হয়েছে,
যাবার আগে নয় কিছু অনুরাগ আমার কাছেই চেয়ে নিলে ।
ছায়াছবি : অর্চনা (১৯৭১)
শিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
সুরকার: সুতনু চট্টোপাধ্যায়
শিল্পী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
সুরকার: সুতনু চট্টোপাধ্যায়
গীতিকার: অজয় দাস
জনম মরণ জীবনের দুই তীরে সপ্ত ডিঙ্গায় হাসি কাঁদি
প্রহর গুনিয়া ধীরে ধীরে...
এই যে দুয়ারে আমার আসে দিন, আসে আঁধার
এখানে জীবনপারে চলেছে নিয়ত খেলা,
এই আছি, এই তো নেই,
শুধু চাহি পিছু ফিরে ফিরে...
সপ্ত সুরের ছোঁয়ায় রামধনু আকাশ সীমায়,
সাতটি রঙের রাগে গানের শিখা যে জাগে
তার আলো তার-ই ছায়া
পড়ে শুধু জীবনের নীড়ে...
বন পাহাড়ী ঝর্না খুঁজে,
বৃষ্টি জলে একলা ভিজে,
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে,বৃষ্টি জলে একলা ভিজে,
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে |
আমি তো বেশ ছিলাম চুপিসাড়ে
ছোট্ট মেয়ে সেজে একলা কোণে,
সবুজ বনে নীলচে আলো জ্বেলে
স্বপ্ন ভেজা মাটিতে পা ফেলে -
সেই ছেলেটা হঠাৎ এলো মনে,
সেই ছেলেটা হঠাৎ এলো মনে |
ছোট্ট আমি, দুষ্টু আমি সে যে,
কেমন যেন হলাম জড়োসড়,
আকাশ ভরা তারার আলো দেখে
বৃষ্টি ভেজা মাটিতে পা রেখে |
বুক ভরা আবেগটুকু দেখে
হঠাৎ করে হয়ে গেলেম বড়ো...
বন পাহাড়ী ঝর্না বৃষ্টি ফেলে
আমায় বাসলো ভালো সেই ছেলে ,
আমায় বাসলো ভালো সেই ছেলে ||
আগুণ ঝরা সন্ধ্যা (২০০৮)
...বুঝতে সেদিন একটুও দ্বিধা হয়নি কারণ,
আগের তুমি বদলে গেছো বিশ্বাস করিনি,
কি বলি ভেবে না পাই বললাম: 'বিয়ে হয় নি?'অপ্রস্তুত তুমি বললে: 'না না না, এখনো করিনি'
একবাক্যেই উত্তর: 'রাত্রে ফোন করেন'।
চারিদিকে বাতি ঝলমল আর হাজার রজনীগন্ধা
সেদিন ছিলো তোমার আমার আগুনঝরা সন্ধ্যা...
সেদিন রাতেই ফোন, কিছুক্ষণ আলাপন,
অনেক আগের চাওয়াদের যেন আবারও আগমন।
আটটি বছর আগে স্মৃতিগুলো চোখে ভাসে
বলতে পারিনি মনের কথাটা বয়সটা ছিলো কম।
চারিদিকে বাতি ঝলমল আর হাজার রজনীগন্ধা
সেদিন ছিলো তোমার আমার আগুনঝরা সন্ধ্যা...
পরের দিনই তোমার বাড়িতে আমার নিমন্ত্রণ,
কেউ জানলোনা কি ঘটে গেলো চারটি চোখে তখন।
তারপর থেকে তোমার বাড়িতে প্রায়শই আসা-যাওয়া
বাড়তে থাকলো ভীষণ গতিতে আমাদের চাওয়া-পাওয়া -
বললাম ভালোবাসি তোমাকে 'ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ'
বলতাম দশ বছর আগে সাহসটা ছিলো কম...
চারিদিকে বাতি ঝলমল আর হাজার রজনীগন্ধা
সেদিন ছিলো তোমার আমার আগুনঝরা সন্ধ্যা
ও দিন দেখা হয়ে গেলো...
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না
গীতিকার: দ্বিজ ভূষণ
গীতিকার: দ্বিজ ভূষণ
সুর: বৈষ্ণব কীর্তন
শিল্পী: লোপামুদ্রা মিত্র (২০০৭)
শিল্পী: লোপামুদ্রা মিত্র (২০০৭)
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর,
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর (আমরা) আর পাবো না
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
ভূবনমোহন গোরা কোন মণিজনার মন-হরা
ওরে রাধার প্রেমে মাতোয়ারা
চাঁদ গৌর আমার রাধার প্রেমে মাতোয়ারা...
ধূলায় যায় ভাই গড়াগড়ি,
যেতে চাইলে যেতে দেবো না,
না না না যেতে দেবো না
তোমায় হৃদয় মাঝে রাখিবো ছেড়ে দেবো না,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
যাবো ব্রজের কূলে কূলে
(আমরা) মাখবো পায়ে রাঙা ধূলি,
ওরে পাগল মন...
ওরে নয়নেতে নয়ন দিয়ে রাখবো তারে
চলে গেলে যেতে দেবো না,
না না যেতে দেবো না,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
যে ডাকে 'চাঁদ গৌর' বলে (ওগো) ভয় কি (গো) তার ব্রজের কূলে ?
ওরে দ্বিজ ভূষণ চাঁদ বলে "চরণ ছেড়ে দেবো না",
না না ছেড়ে দেবো না...
না না ছেড়ে দেবো না...
তোমায় বক্ষ মাঝে রাখিবো ছেড়ে দেবো না,
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না,
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবো না...
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌর আর পাবো না
ফেরারী মন (শ্রেয়া ঘোষাল ও বাবুল সুপ্রিয়)
ছায়াছবি : অন্তহীন (বেস্ট ফিল্ম/লিরিকস/ফিমেল প্লেব্যাক/সিনেমাটোগ্রাফি)
নির্দেশনা: অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী - ২০০৯
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না...
ফেরারী মন (শ্রেয়া ঘোষাল ও বাবুল সুপ্রিয়)
ছায়াছবি : অন্তহীন (বেস্ট ফিল্ম/লিরিকস/ফিমেল প্লেব্যাক/সিনেমাটোগ্রাফি)
নির্দেশনা: অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী - ২০০৯
সুরকার: শান্তনু মৈত্র (waived his fees for this song)
গীতিকার: শ্যামল সেনগুপ্ত
গীতিকার: শ্যামল সেনগুপ্ত
আলো আলো রঙ, জমকালো চাঁদ ধুয়ে যায়
চেনাশোনা মুখ জানাশোনা হাত ছুঁয়ে যায়,
ফিরে ফিরে ঘুম, ঘিরে ঘিরে গান, রেখে যায়
কিছু মিছু রাত, পিছু পিছু টান ডেকে যায়,
আজও আছে গোপন ফেরারী মন
বেজে গেছে কখন সে টেলিফোন...
চেনাশোনা মুখ জানা শোনা হাত রেখে যায়,
ছোটো ছোটো দিন, আলাপে রঙিন নুড়ির-ই মতোন
ফিরে ফিরে ঘুম, ঘিরে ঘিরে গান, ডেকে যায়
ছোটো ছোটো রাত, চেনা মৌতাত, পলাশের বন
আহা! আগোছালো ঘর, খড়কুটোময় চিলেকোঠা কোণ
কথা ছিলো হেঁটে যাবো ছায়াপথ...
কিছু মিছু রাত, পিছু পিছু টান অবিকল,
আলো আলো রঙ, জমকালো চাঁদ ঝলমল
আজও আছে গোপন ফেরারী মন
বেজে গেছে কখন সে টেলিফোন...
গুঁড়ো গুঁড়ো নীল, রঙ পেন্সিল, জোছনার জল
ঝুরো ঝুরো কাঁচ, আগুন ছোয়াঁচ ঢেকেছে আঁচল
আহা, ফুটপাথে ভীড়, জাহাজের ডাক, ফিরে চলে যাই
কথা ছিলো হেঁটে যাবো ছায়াপথ...
আজও আছে গোপন ফেরারী মন
বেজে গেছে কখন সে টেলিফোন...
সুদাম বন্দোপাধ্যায় - পূজার গান - সাল: ১৯৭৩
সুরকার ও গীতিকার: অজানা....
দুরে থেকো, তবু সুখে থেকো, শুধু মনে রেখো - 'এই, আমি আছি...'
তোমার মনের কাছাকাছি, 'এই, আমি আছি...'
ঘুম যদি ভাঙে মাঝ রাতে, আমাকে না-পেয়ে মন যদি কাঁদে,
চেয়ে দেখো বন-জোছনাতে আলো হয়ে আমি মিশে আছি -
'এই, আমি আছি...', তোমার মনের কাছাকাছি...
পাখি ডাকা কোনো নিশিভোরে, শেফালী ফুলেরা পরে ঝরে,
মনে কোরো ঝরাফুল হয়ে ভালোবাসা নিয়ে ঝরে গেছি -
'এই, আমি আছি...', তোমার মনের কাছাকাছি...
তোমার মনের কাছাকাছি, 'এই, আমি আছি...'
ঘুম যদি ভাঙে মাঝ রাতে, আমাকে না-পেয়ে মন যদি কাঁদে,
চেয়ে দেখো বন-জোছনাতে আলো হয়ে আমি মিশে আছি -
'এই, আমি আছি...', তোমার মনের কাছাকাছি...
পাখি ডাকা কোনো নিশিভোরে, শেফালী ফুলেরা পরে ঝরে,
মনে কোরো ঝরাফুল হয়ে ভালোবাসা নিয়ে ঝরে গেছি -
'এই, আমি আছি...', তোমার মনের কাছাকাছি...
মৃনাল চক্রবর্তী - পূজার গান - সাল: ১৯৭১
গীতিকার: ভাস্কর বসু
সুরকার: দিনেন্দ্র চৌধুরী
সুরকার: দিনেন্দ্র চৌধুরী
সে এক পাহাড়ী বাংলো থেকে বনে অরণ্যে ঘুরে,
বন-ময়ুরের খোঁজে নিঃশব্দে পা-টিপে ধনুক নিয়ে ভাবি
তীর দেবো কিনা দেবো ছুঁড়ে ।
তারপর...
তারপর ভেবেছিলেম শুনবো এবার শুধু দুই ডানার ঝটপটি সেই ময়ুরের
ঘুরতে ঘুরতে কোথায় পড়বে দূরে -
বনপলাশের ডালে বিচ্ছেদে তার শোকে
ময়ুরী আকাশকে কান্নায় ভরিয়ে যাবে উড়ে...
তাই কোনো দিকে চোখ না মেলিয়ে ,
এ ধনুক দিয়ে বাণ বেঁধে ফেলি - আমি চোখ না মেলি ।
বন-ময়ুরের খোঁজে নিঃশব্দে পা-টিপে ধনুক নিয়ে ভাবি
তীর দেবো কিনা দেবো ছুঁড়ে ।
তারপর...
তারপর ভেবেছিলেম শুনবো এবার শুধু দুই ডানার ঝটপটি সেই ময়ুরের
ঘুরতে ঘুরতে কোথায় পড়বে দূরে -
বনপলাশের ডালে বিচ্ছেদে তার শোকে
ময়ুরী আকাশকে কান্নায় ভরিয়ে যাবে উড়ে...
তাই কোনো দিকে চোখ না মেলিয়ে ,
এ ধনুক দিয়ে বাণ বেঁধে ফেলি - আমি চোখ না মেলি ।
হঠাৎ...
হঠাৎ চেয়ে দেখি অবাক হয়ে,
এক সাঁওতালি কন্যা তার হাসির বাণে বিঁধলো এসে আমার হৃদয়পুরে,
সে তীর বেঁধার আগে নিশ্চিন্তে সে পাখি বসলো উড়ে
কোনো দূর বনপারে পাহাড়ের চূড়ে ।।
একটি সন্ধ্যা (অশোকবিজয় রাহা)
শারদীয়া দেশ -১৩৮৩ (পৃষ্ঠা: ২৬৯)
শারদীয়া দেশ -১৩৮৩ (পৃষ্ঠা: ২৬৯)
বিকেলে বেড়াতে গিয়েছিলাম সুরুল পেরিয়ে
পথের দুধারে শালবন
গাছে-পাতায় পড়ন্তবেলার ঝিকিমিকি
মুখে-চুলে ঝিরঝিরে হাওয়া
আপন মনে গুন গুন করে চলেছি একটা সুর ।
হঠাৎ চমক ভাঙে --
বন শেষ,
সামনে খোয়াই ।
যতদুর চোখ যায়
লাল কাঁকরের উত্তাল ডামাডোল
মাটির বুকে উঠেছে লাল আগুনের ঝড় ---
এক কোনে দাউ দাউ সূর্যাস্ত ।
থমকে দাঁড়াই ।
কতক্ষণ কাটে জানি নে
হঠাৎ কানে আসে এক তীক্ষ্ণ আর্ত্মনাদ ---
পিছন ফিরে তাকাই
দেখি একটু দূরে মাটিতে ডানা ঝাপ্টাছে
একটি তীর-বেঁধা তিতির
ওদিকে ধনুক হাতে ছুটে আসছে এক সাঁওতাল ছেলে ।
চুপ করে থাকি
অজান্তে বেরিয়ে আসে একটি দীর্ঘশ্বাস,
ফিরে দেখি সূর্য ডুবে গেছে
খোয়াইয়ের বুকে নেমেছে সন্ধ্যার ছায়া ।
পথের দুধারে শালবন
গাছে-পাতায় পড়ন্তবেলার ঝিকিমিকি
মুখে-চুলে ঝিরঝিরে হাওয়া
আপন মনে গুন গুন করে চলেছি একটা সুর ।
হঠাৎ চমক ভাঙে --
বন শেষ,
সামনে খোয়াই ।
যতদুর চোখ যায়
লাল কাঁকরের উত্তাল ডামাডোল
মাটির বুকে উঠেছে লাল আগুনের ঝড় ---
এক কোনে দাউ দাউ সূর্যাস্ত ।
থমকে দাঁড়াই ।
কতক্ষণ কাটে জানি নে
হঠাৎ কানে আসে এক তীক্ষ্ণ আর্ত্মনাদ ---
পিছন ফিরে তাকাই
দেখি একটু দূরে মাটিতে ডানা ঝাপ্টাছে
একটি তীর-বেঁধা তিতির
ওদিকে ধনুক হাতে ছুটে আসছে এক সাঁওতাল ছেলে ।
চুপ করে থাকি
অজান্তে বেরিয়ে আসে একটি দীর্ঘশ্বাস,
ফিরে দেখি সূর্য ডুবে গেছে
খোয়াইয়ের বুকে নেমেছে সন্ধ্যার ছায়া ।
ফেরার পথে শেষবার চোখ পড়ে আকাশে
পশ্চিম-দিগন্তের ধারটিতে একট করুণ রক্তিমা ---
মনে হলো এ যেন দিনান্তের স্বপ্ন-মরীচিকা
পশ্চিম-দিগন্তের ধারটিতে একট করুণ রক্তিমা ---
মনে হলো এ যেন দিনান্তের স্বপ্ন-মরীচিকা
তাতে মিশে আছে একটি রক্তাক্ত তিতিরের কান্না ।।
আরতি মুখোপাধ্যায় - পূজার গান - সাল: ১৯৭৭
গীতিকার : সুবীর হাজরা
সুরকার : হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
ফুলের গন্ধ একটু একটু করে তুমি নিয়ে গেছো সরে ---
কোথায় রেখেছো, কিসের পাত্রে ভ'রে?
আমি ভাবি, শুধু ভাবি এমন কেন যে সবই,
জীবনরেখায় গ্রহণ লেগেছে,
গীতিকার : সুবীর হাজরা
সুরকার : হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
ফুলের গন্ধ একটু একটু করে তুমি নিয়ে গেছো সরে ---
কোথায় রেখেছো, কিসের পাত্রে ভ'রে?
আমি ভাবি, শুধু ভাবি এমন কেন যে সবই,
জীবনরেখায় গ্রহণ লেগেছে,
দহনে জ্বালাতে মোরে ।
মৃত্যুর সাথে চলে অভিসার,
জন্মে যে তার একা অধিকার
রয়েছে আঁচল ধরে ।
আমি আছি, তবু আছি প্রলাপের মতো বাঁচি ---
আমার আকাশে আঁধার নেমেছে,
তারারা গিয়েছে ঝ'রে ।।
অনেকদিন দেখা হবে না
তারপর একদিন দেখা হবে।
দু’জনেই দু’জনকে বলবো,
‘অনেকদিন দেখা হয়নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন
বৎসরের পর বৎসর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না,
যে তোমার সঙ্গে আমার
অথবা আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।
- তারাপদ রায়
মাটি ও আশ্চর্য সত্য (হুমায়ুন আহমেদ)
দুটি নক্ষত্র একাকী দাঁড়িয়ে ছিলো
ইশারার অপেক্ষায়,
তারপরে অকারণে স্থলন ---
হয়তো পতন,
যোজন দূরত্ত্ব পেরিয়ে অবশেষে নিঃশব্দ আর নিঃসঙ্গ শূন্যতায় ।
তারপরে অকারণে স্থলন ---
হয়তো পতন,
যোজন দূরত্ত্ব পেরিয়ে অবশেষে নিঃশব্দ আর নিঃসঙ্গ শূন্যতায় ।
পাশাপাশি পুনরায় নড়ায় আওয়াজ
ধূসর স্মৃতি, অতীতের ঘ্রাণ সবকিছু
ঢেকে আছে গাড় কালো অন্ধকার ।
নক্ষত্রের পতনে কিম্বা উত্থানে
আমার কিছু যায় আসেনা ---
আমি তো আকাশে তাকাই না ---
আমি ধূলো হয়ে
ধূসর স্মৃতি, অতীতের ঘ্রাণ সবকিছু
ঢেকে আছে গাড় কালো অন্ধকার ।
নক্ষত্রের পতনে কিম্বা উত্থানে
আমার কিছু যায় আসেনা ---
আমি তো আকাশে তাকাই না ---
আমি ধূলো হয়ে
ধূলোদের সাথে খেলা করি ।
দেখি আশ্চর্য বালকের ঠোঁটে রঙ্গীন হাসি
পাখিদের হাসিতে সকালের রোদ ।
ধূলো না হলে হয়তো এতো কাছ থেকে তোমাদের দেখা হতো না,
তাই আমি ধূলোয়,
তাই আমি ধূলোয়,
আমি একা ---
বিস্মৃত এক ভগ্নাংশ ।।
বিস্মৃত এক ভগ্নাংশ ।।
জোছনা ধরতে যাই,
হাত ভর্তি চাঁদের আলো,
ধরতে গেলে নাই।
- হুমায়ুন আহমেদ।
স্থির সত্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বহুদিন আকাশ ভাসানো জ্যোৎস্নায়
হেঁটে যাইনি
নদীর কিনারায়
একটি ঘাসফুল ছিঁড়ে নিয়ে ছুঁড়ে দেইনি স্রোতে
বহুদিন, বহুদিন-
তবু আমি জানি
এখনো কোনোদিন জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় আকাশ
আমার জন্য প্রতীক্ষা করে
নদীর কিনারার মাটি প্রতীক্ষা করে আছে
আমার পদস্পর্শের
ঘাসফুলটি হাওয়ায় দুলছে প্রতীক্ষায়
আমি তাকে ছিঁড়ে নেব
জলস্রোত ছলচ্ছল শব্দে আমায় ডাক পাঠাবে
এই সব স্থির সত্য নিয়ে বেঁচে আছি ।'
ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা।
-- সমরেশ মজুমদার।
প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,
আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য ,
আমার ঈশ্বর জানেন আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।
তারপর অনেকদিন পর একদিন
তুমি ও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য।
শুধু তোমার জন্য।
-- নির্মলেন্দু গুণ
একটা সারাদিন কিছুই করব না আমরা,
না, কিছুই না।
হয়তো সারাটা দিন আমরা পাশাপাশি
বসে থাকব, অনন্তকালের মতো ।
হয়তো আবার একাও থাকবো,
কিন্তু সত্যি বলছি একটা সম্পূর্ণ দিন আমরা কিছুই করবো না।
এই হেমন্তে যে নদী মৃত্যুর প্রস্তুতি নেবে
আগামী শীতের, তার মতো আমরাও প্রস্তুত হবো
আমাদের একটা সারাদিনের জন্যে, এই হেমন্তে।
কে জানে বলো,
আগামী শীতে হয়তো আমরা থাকবনা।।
- নির্মলেন্দু গুণ।
বহুদিন আকাশ ভাসানো জ্যোৎস্নায়
হেঁটে যাইনি
নদীর কিনারায়
একটি ঘাসফুল ছিঁড়ে নিয়ে ছুঁড়ে দেইনি স্রোতে
বহুদিন, বহুদিন-
তবু আমি জানি
এখনো কোনোদিন জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় আকাশ
আমার জন্য প্রতীক্ষা করে
নদীর কিনারার মাটি প্রতীক্ষা করে আছে
আমার পদস্পর্শের
ঘাসফুলটি হাওয়ায় দুলছে প্রতীক্ষায়
আমি তাকে ছিঁড়ে নেব
জলস্রোত ছলচ্ছল শব্দে আমায় ডাক পাঠাবে
এই সব স্থির সত্য নিয়ে বেঁচে আছি ।'
ছেলেরা ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে যে কখন সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তারা তা নিজেও জানেনা। মেয়েরা সত্যিকার ভালোবাসতে বাসতে যে কখন অভিনয় শুরু করে তারা তা নিজেও জানেনা।
-- সমরেশ মজুমদার।
প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস–
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।।
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়,
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ।।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার চুল পেকেছে তোমার জন্য,
আমার গায়ে জ্বর এসেছে তোমার জন্য ,
আমার ঈশ্বর জানেন আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য।
তারপর অনেকদিন পর একদিন
তুমি ও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য।
শুধু তোমার জন্য।
-- নির্মলেন্দু গুণ
একটা সারাদিন কিছুই করব না আমরা,
না, কিছুই না।
হয়তো সারাটা দিন আমরা পাশাপাশি
বসে থাকব, অনন্তকালের মতো ।
হয়তো আবার একাও থাকবো,
কিন্তু সত্যি বলছি একটা সম্পূর্ণ দিন আমরা কিছুই করবো না।
এই হেমন্তে যে নদী মৃত্যুর প্রস্তুতি নেবে
আগামী শীতের, তার মতো আমরাও প্রস্তুত হবো
আমাদের একটা সারাদিনের জন্যে, এই হেমন্তে।
কে জানে বলো,
আগামী শীতে হয়তো আমরা থাকবনা।।
- নির্মলেন্দু গুণ।
গৃহত্যাগী জোছনা - হুমায়ুন আহমেদ
প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই
গৃহত্যাগী হবার মতো জোছনা কি উঠেছে ?
আমি সিদ্ধার্থের মতো এক গৃহত্যাগী জোছনার
প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই
গৃহত্যাগী হবার মতো জোছনা কি উঠেছে ?
আমি সিদ্ধার্থের মতো এক গৃহত্যাগী জোছনার
জন্যে বসে আছি ।
যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত
দরজা খুলে যাবে ---
ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর ।
যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত
দরজা খুলে যাবে ---
ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর ।
প্রান্তরে হাঁটবো, হাঁটবো আর হাঁটবো ---
পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে,
চারিদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ ডাকবে
আয়, আয়, আয় ।।
মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়া ভালো...
কি মোহন খোঁপা তুমি বেঁধেছো বৃষ্টির জলে ধুয়ে
কতোকাল পরে চুলে গুজেছো রজনীগন্ধা বুঝি,
কপালে পরেছো নাকি কাঁচপোকা সবুজের টিপ
চোখের ভুরুর তীরে এঁকেছো যে কাজলের রেখা !
তোমাকে গেরুয়া রঙ শাড়িতে যে এত মানায়
আগে তো দেখিনি, তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলে ?
নাকি হঠকারী এই বর্ষা এসে মায়াবী আড়াল খুলে দিল,
তুমি স্রোতের উজানে ভেসে এলে ।
বয়স যৌবন কাড়ে, জীবন তো কাড়তে পারেনা
মরণ জীবন কাড়ে, কবিতার স্বপ্ন তো কাড়তে পারেনা
আমাদের মৃত্যু হয়, স্বপ্ন পড়ে থাকে ধরা যতদিন রয়,
আমরা নক্ষত্রের মতো বেঁচে থাকি যাবতীয় যুবক
ও যুবতীর বুকে ।
কপালে পরেছো নাকি কাঁচপোকা সবুজের টিপ
চোখের ভুরুর তীরে এঁকেছো যে কাজলের রেখা !
তোমাকে গেরুয়া রঙ শাড়িতে যে এত মানায়
আগে তো দেখিনি, তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলে ?
নাকি হঠকারী এই বর্ষা এসে মায়াবী আড়াল খুলে দিল,
তুমি স্রোতের উজানে ভেসে এলে ।
বয়স যৌবন কাড়ে, জীবন তো কাড়তে পারেনা
মরণ জীবন কাড়ে, কবিতার স্বপ্ন তো কাড়তে পারেনা
আমাদের মৃত্যু হয়, স্বপ্ন পড়ে থাকে ধরা যতদিন রয়,
আমরা নক্ষত্রের মতো বেঁচে থাকি যাবতীয় যুবক
ও যুবতীর বুকে ।
বর্ষা রটনা করলো এ ঘোষণা বৃষ্টির শব্দে ও মেঘ ডেকে,
বিজ্ঞজনেরা বলেন "মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়া ভালো..." ।
বিদায়
এখন আর কারো সঙ্গে দেখা হয় না, জনারন্যে বিছিন্ন কলকাতা
দোয়াত উপুড় করা তুমুল বৃষ্টিতে সব
পারাপারহীন পাঁকজলে ডুবে যায়,
ট্রাফিক আইল্যান্ড জলবন্দী পথের নাটকে জেগে থাকে ।
রুমালে দু'চোখ বাঁধা মানুষের খুব কাছে যেমন মানুষ
নাগালের মধ্যে এসে সরে সরে যায় আলতো পায়ে,
গায়ে এসে লাগে ছলকানো নি:শ্বাস,
কিছু ফিসফাস কথার ছলনা ।
ট্রাফিক আইল্যান্ড জলবন্দী পথের নাটকে জেগে থাকে ।
রুমালে দু'চোখ বাঁধা মানুষের খুব কাছে যেমন মানুষ
নাগালের মধ্যে এসে সরে সরে যায় আলতো পায়ে,
গায়ে এসে লাগে ছলকানো নি:শ্বাস,
কিছু ফিসফাস কথার ছলনা ।
জানি, আছে সবাই নিকটে, আছে তেমনি করে,
শুধু দেখা হয়না এখন !
উত্তরে-দক্ষিনে-পূবে তার ছক বেড়েছে যদিও
ক্রমশ নিশ্ছিদ্র হয় কলকাতার রুদ্ধশ্বাস মুঠো
মাথায় মাথায় কালো রাস্তাগুলো পাঁচিল তুলেছে,
বিপদজনক বাস টাল খেয়ে আবর্জনা ছড়াতে ছড়াতে
অন্য দূর্ঘটনার দিকে চলে যায় চোখের পলকে ।
এখন আর কারও সঙ্গে দেখা হয় না,
নষ্ট টেলিফোনে কান চেপে,
শ্লেটের লেখার মতো মুছে গেছে প্রিয়জন,
বন্ধুজন, নারী...
যে ছিলো চোখের জল, আমার ঘড়ির সঙ্গে যার
ঘড়ি মিলতো বাস স্টপে -
না-লেখা গল্পের কিছু পৃষ্ঠা কোনো চিলেকোঠা
সিঁড়ির তলায় খোয়া গেছে,
শঙ্খচিল আকাশের নীচে মাশুলবিহীন চিঠি,
লজ্জাহর প্রথম চুম্বন...
না-লেখা গল্পের কিছু পৃষ্ঠা কোনো চিলেকোঠা
সিঁড়ির তলায় খোয়া গেছে,
শঙ্খচিল আকাশের নীচে মাশুলবিহীন চিঠি,
লজ্জাহর প্রথম চুম্বন...
আমি বড় মূর্খ,
আমি নিরন্তর বিদায় বুঝিনি ।।
কুড়ি-কুড়ি বছরের পার -
সৌরভ মুখোপাধ্যায়
সানন্দা নববর্ষ গল্প সংখ্যা ১৪১৯
আবার যদি তার সঙ্গে দেখা হয় বছর কুড়ি পরে...
দাবি করবো, ভিক্ষে নয় ---
আবার যদি তার সঙ্গে দেখা হয় বছর কুড়ি পরে...
দাবি করবো, ভিক্ষে নয় ---
সেই সবকিছু যা আমার,
একান্ত আমারই ছিলো স্বপ্নে-পাওয়া কল্পনাতে-গড়া...
হাসি-কান্না-অভিমান, আলোছায়া-মাখা প্রাত্যহিক,
তুচ্ছতম সুখদুঃখে লেগে-থাকা স্বর্ণরেণুগুলি,
হা-ক্লান্ত দিনের শেষে ডোরবেলে প্রত্যাশী আঙ্গুল ।
রান্নাঘর, সিরিয়াল, পুরী ভ্রমণ, পুজো মার্কেটিং
ছোট ছোট বিপন্নতা, ঝগড়াঝাঁটি, বন্ধ বাতচিৎ
মাঝরাতে অকস্মাৎ গেরিলা চুমুর হানা,
সব তছনছ...
একান্ত আমারই ছিলো স্বপ্নে-পাওয়া কল্পনাতে-গড়া...
হাসি-কান্না-অভিমান, আলোছায়া-মাখা প্রাত্যহিক,
তুচ্ছতম সুখদুঃখে লেগে-থাকা স্বর্ণরেণুগুলি,
হা-ক্লান্ত দিনের শেষে ডোরবেলে প্রত্যাশী আঙ্গুল ।
রান্নাঘর, সিরিয়াল, পুরী ভ্রমণ, পুজো মার্কেটিং
ছোট ছোট বিপন্নতা, ঝগড়াঝাঁটি, বন্ধ বাতচিৎ
মাঝরাতে অকস্মাৎ গেরিলা চুমুর হানা,
সব তছনছ...
এই সব,
সব কিছু আমার পাওয়ার ছিলো, নিরঙ্কুশ একা...
দ্যাখো তবু, আজ এই কুড়ি কুড়ি বছরের দুপারে দু'জনে
নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছি, চোখে চোখ,
দ্যাখো তবু, আজ এই কুড়ি কুড়ি বছরের দুপারে দু'জনে
নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছি, চোখে চোখ,
মধ্যে টানা লক্ষণের খড়ি ।
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের
জীবন গিয়েছে চলে আমাদের
কুড়ি-কুড়ি বছরের পার !
কুড়ি বছর পরে... জীবনানন্দ দাশ
জীবন গিয়েছে চ'লে আমাদের কুড়ি কুড়ি, বছরের পার-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো পথে পাই আমি তোমারে আবার ।
হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু-সরু কালো-কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার ,
শিরিষের অথবা জামের,
ঝাউযের--- আমের,
কুড়ি বছরের পরে তখন তোমারে নাই মনে ।
জীবন গিয়েছে চ'লে আমাদের কুড়ি কুড়ি, বছরের পার -
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার ।
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার ।
তখন হয়তো মাঠে হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা নামে --
বাবলার গলির অন্ধকারে
অশথের জানালার ফাঁকে
কোথায় লুকায় আপনাকে ।
চোখের পাতার মতো নেমে চুপি কোথায় চিলের ডানা থামে-
সোনালী সোনালী চিল- শিশির শিকার ক'রে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে ।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
[[
This famous song was written by Bengali poet Rudra Mohammad Shahidullah Imam (1956-1992). Rudra was noted for his revolutionary and romantic poetry and considered one of the leading Bengali poets of 1970s.He was the husband of writer Taslima Nasrin. In 1982 Taslima Nasrin fell in love with Rudra and fled home to marry him. They divorced in 1986.
Rudra died on 21st June 1992 as a result of drug abuse. Some people consider the song as a suicide note to Taslima Nasrin.
]]
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম,
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে...
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ,
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে...
ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো -
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটারে...
একটা নিজস্ব শব্দ থাকে।
প্রত্যেক শব্দের থাকে একটি পরিণতি।
না বলে যা বলতে পেরেছি আমি;
বলে তা বোঝাতে পারিনি তাকে!
- রুদ্র গোস্বামী।
নদীতে দেখেছি পুর্ণিমা চাঁদ
ভালোবেসেছি ভুলে
ডুববো বলেই নৌকা আমার
ভিড়াতে পারিনি কূলে ।
-- রুদ্র গোস্বামী
একদিন
একদিন তুমি, জানি আমি,
আমার কাছে আসবে ফিরে,
ভালবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে
খুঁজবে আমায় শীতের ভোরে ।
একদিন জানি আসবে তুমি
সব কিছুকে তুচ্ছ করে,
খুঁজে বেড়াবে আমায় তুমি
সব চেনা-অচেনা মোড়ে ।
একদিন যখন আসবে ফিরে
খুঁজতে আমায় পুরানো নীড়ে,
আমি তখন তারা হবো
নীল আকাশে অনেক দূরে ।
তারপর, ফিরে আসা...
জীবন থেকে ভুল শিখে নিতে হয়
তবেই নাকি বড়ো হওয়া যায়,
কেউ কিন্তু বলেনা যে কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক...
বৃত্তের পরিধি ঘুরে অবিরাম চলি ছুটে
ভাবি এটাই তো সরল রেখা -
কেউ কিন্তু বলে না যে বিশাল বৃত্তের
পরিধি-ই হলো এক সরল রেখা
তবেই নাকি বড়ো হওয়া যায়,
কেউ কিন্তু বলেনা যে কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক...
বৃত্তের পরিধি ঘুরে অবিরাম চলি ছুটে
ভাবি এটাই তো সরল রেখা -
কেউ কিন্তু বলে না যে বিশাল বৃত্তের
পরিধি-ই হলো এক সরল রেখা
ভুল করে তাই আজও তোমায়-ই চাই...
কেউ কিন্তু বলে না যে চাইবার আগেও
অধিকার অর্জন করে নিতে হয়...
চেতনা
নারকেল গাছের ঠিক ওপারেই রয়েছে অস্তগামী সূর্য্য,
কারণ পাতার আড়ালে ঢেকে আছে তার কিছুটা
হাঁটাপথে গেলেও ঠিক ধরা যাবে !
কারণ পাতার আড়ালে ঢেকে আছে তার কিছুটা
হাঁটাপথে গেলেও ঠিক ধরা যাবে !
ঘর আঁধার করে চেয়ে থাকো - কিছু দেখতে পাবে না,
কিন্তু চোখ বন্ধ করে চেয়ে থাকো -
হাজার হাজার রঙের খেলা ফুটে উঠবে নিমেষে,
এ বিপুল রঙের জন্ম তোমার মনে - তাই
খোলা চোখে কখনো তাদের যাবে না আঁকা,
অথচ তোমাকে ঘিরেই বেঁচে আছে এরা
জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই পাহাড় ছোঁয়া যাবে
সত্যিকারের ছুঁতে গিয়ে টের পাবে,
কষ্ট কিছু কম ছিলো না -
ঈশ্বরের উপস্তিথিও বা অনেকটা সেই রকমই
কখনো কাছে, কখন দূরে -
বন্ধ চোখে একমনে
ধরা দেয় মনের কোণে।
কিছু প্রেম, কিছু দীর্ঘশ্বাস!
রোমেল চৌধুরী
গোধূলির পথে হাঁটতে হাঁটতে কুড়িয়ে পেলাম
সূর্যের কিছু রেণু;
যত্ন করে রাখতে গেলাম চোখে...
শঙ্কা ভীষণ হলো
যদি চোখের জলে হারিয়ে ফেলি ওকে !
দুষ্টু তো হয়েছ ভারি...
যখন তখন শুধু খুনসুটি!
অকারণ অভিমানে ঠোঁট ফোলাচ্ছ, ভ্রুকুঞ্চনে আঁকছ কপট রাগ
কড়ে আঙুল দেখাচ্ছো, দিচ্ছো আড়ি
অথচ সময় দেখ কেমন বয়ে যাচ্ছে নিস্তরঙ্গ
গোধূলির ছায়াপথে তার গোলাপি রেখার দাগ
হায় যদি ফিরিয়ে দিতো যৌবনের পরাগ !
ছাড়ো খুনসুটি !
ফুরিয়ে যাবার আগে
এসো একবার চুপচাপ কাছাকাছি বসি...
অভিমান দূরে থাক
চুমুগুলো উড়ে যাক এক ঝাঁক বুনো কপোতের মতো
খুঁজে পাক পিছুডাক
ঠোঁটে ঠোঁটে অস্ফুট শিহরিত উল্লাস যতো !
বিন্দু বিন্দু জল জমে জমে সাগর তৈরী হয় - সত্যিই কি হয়?
তাহলে তো বিন্দু বিন্দু আশা জমে
বড়ো কোনো প্রত্যাশার জন্ম দিতো !
ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট আশা
চিরকাল আশাই থেকে যায় ,
ঝাঁক বাঁধা মেঘেরা কখনো নীল আকাশকে
পুরোপুরি ঢাকতে পারে না -
আশার জন্ম দিয়ে এবং আশাকে বুকে নিয়ে
এই তিনটে-কে হিসেব করে সঙ্গে রাখিস
সারা জীবন টাট্টু ঘোড়ার মতন দৌড়ুতে পারবি !
তিনটে না-হোক, অন্তত দুটো
দুটো না-হোক, অন্তত একটা।
আর মনে রাখিস
তোদের চিত্ত যেন বিত্তের জন্যে অতি-লোভী হয়ে না-ওঠে !
যদি আজ বিকালের ডাকে তার কোনো চিঠি পাই ?
যদি সে নিজেই এসে থাকে
যদি তার এতকাল পরে মনে হয়
দেরী হোক, যায়নি সময় ?
(আশাবরী)
এই পৃথিবীর মধ্যে ছিল অনন্ত এক শীতলপাটি ।
অনেক দাঙ্গা ঝগড়াঝাঁটি পার হয়ে তাই ভালোবাসা
জাগিয়েছিল অনেক আশা,
ফুটিয়ে ছিলো অজস্র রং
খানিকটা তার গদ্য এবং
খানিকটা তার পদ্যে ছিল ।
(নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী)
আকাশে চুলের গন্ধটি দিয়ো পাতি,
নিশুত রাতের জোছনা এসে স্মৃতির ভাঁড়ার লোটে,
ফাগুন হাওয়ায় সিঁদকাঠিটা বুকের ভিতর ফোটে,
হৃদয় ফেটে কাব্য ঝরে ব্যথার নানান পারা
রূপকথা নয়, রূপকথা নয় এই জীবনের ধারা...
বড় ভুল সময়ে এলে তুমি...
তোমাকে ভালোবাসতে না পারার কষ্টটা
তোমাকে ভালোবাসার থেকেও দামি।
তুমি কি সেটা বোঝো?
আমি হয়তো তোমার মতোই একজনকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম।
যে আমাকে নিজের সমস্ত কষ্ট নির্দ্বিধায় বলে দেবে...
অজস্রবার ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও ভেজা চোখে আমার চোখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকবে।
আমাকে খুব করে ভালোবাসবে...
বাউল
কি উপায় বলো না
গুরু, কি উপায় বলো না ...
তুমি সব খোলো, মন খোলো না -
ভেবেছিলাম সঙ্গে যাবো,
সঙ্গে নেবে,
সঙ্গ পাবো...
সং সেজে কাটলো বেলা,
সংগতে আর হলো না...
গুরু, কি উপায় বলো না !
বড়ো কোনো প্রত্যাশার জন্ম দিতো !
ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট আশা
চিরকাল আশাই থেকে যায় ,
ঝাঁক বাঁধা মেঘেরা কখনো নীল আকাশকে
পুরোপুরি ঢাকতে পারে না -
আশার জন্ম দিয়ে এবং আশাকে বুকে নিয়ে
বিমর্ষ মানুষের দল এ পৃথিবী থেকে
এক না একদিন হারিয়ে যায়।
সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন মানুষেরা আসে,
নতুন নতুন আশারও জন্ম হয় -
কারোর কারোর আশা হয়ত একদিন 'প্রত্যাশায়'
পরিণত হয় - ইতিহাস তাদের vanquished বলে...
আমার সব ছোট ছোট আশা, বলতে পারো
যাদের ভালোবাসা,
সব তোমাকেই ঘিরে -
তাই আমি কখনো বিজয়ীদের দলে পড়ি না...
শক্তিপদ ব্রম্ভচারী (শারদীয়া দেশ ১৪০২)
মাষ্টারমশাই বলতেন:
কিছুই কিছু নয় বাপু, আসলে সব তিনটে 'ব' !
আমরা অবাক অথবা বিহ্বল চোখে
স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
কারণ, আমাদের তখন বয়:সন্ধির সময়
তখন আমাদের কারো-বা গলার স্বর ভাঙছে
কারো-বা নাকের নীচে কালো রঙের পৌরুষের উঁকিঝুঁকি
আর আমাদের সত্যগোপাল,
সেতো রীতিমতন সাবালক
কারণ, সেকালের বরদা মোক্তারের মেজো মেয়ে
ইস্কুলে যাওয়া-আসার পথে ওর দিকে আড়চোখে ঘনঘন তাকাচ্ছে।
অতএব, আমরা সবাই তখন পঞ্চ 'ম'-কারের
মানে জেনে গেছি !
কিন্তু ত্রি-বকার ? তিনটে 'ব' ?
মাষ্টারমশাই আমাদের জোড়া-জোড়া ট্যারা চোখের সামনে
যাকে বলে মেঘমন্দ্র স্বর,
সেই কন্ঠস্বরে বললেন: বিদ্যে, বুদ্ধি আর বিত্ত এই তিনটে-কে হিসেব করে সঙ্গে রাখিস
সারা জীবন টাট্টু ঘোড়ার মতন দৌড়ুতে পারবি !
তিনটে না-হোক, অন্তত দুটো
দুটো না-হোক, অন্তত একটা।
আর মনে রাখিস
তোদের চিত্ত যেন বিত্তের জন্যে অতি-লোভী হয়ে না-ওঠে !
আমরা স্যারের গায়ের পাঞ্জাবির তলায়
প্রতিক্রিয়াশীল শুভ্র পৈতের আভাস দেখতে পাচ্ছিলাম ?
যদি আজ বিকালের ডাকে তার কোনো চিঠি পাই ?
যদি সে নিজেই এসে থাকে
যদি তার এতকাল পরে মনে হয়
দেরী হোক, যায়নি সময় ?
(আশাবরী)
এই পৃথিবীর মধ্যে ছিল অনন্ত এক শীতলপাটি ।
অনেক দাঙ্গা ঝগড়াঝাঁটি পার হয়ে তাই ভালোবাসা
জাগিয়েছিল অনেক আশা,
ফুটিয়ে ছিলো অজস্র রং
খানিকটা তার গদ্য এবং
খানিকটা তার পদ্যে ছিল ।
(নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী)
আকাশে চুলের গন্ধটি দিয়ো পাতি,
এনো সচকিত কাঁকনের রিনরিন
আনিয়ো মধুর স্বপ্নসঘন রাতি,
আনিয়ো গভীর আলস্যঘন দিন...
তোমাতে আমাতে মিলিত নিবিড় একা--
স্থির আনন্দ, মৌনমাধুরীধারা,
মুগ্ধ প্রহর ভরিয়া তোমারে দেখা,
তব করতল মোর করতলে হারা ।।
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নিমন্ত্রণ)
নিশুত রাতের জোছনা এসে স্মৃতির ভাঁড়ার লোটে,
ফাগুন হাওয়ায় সিঁদকাঠিটা বুকের ভিতর ফোটে,
হৃদয় ফেটে কাব্য ঝরে ব্যথার নানান পারা
রূপকথা নয়, রূপকথা নয় এই জীবনের ধারা...
বড় ভুল সময়ে এলে তুমি...
তোমাকে ভালোবাসতে না পারার কষ্টটা
তোমাকে ভালোবাসার থেকেও দামি।
তুমি কি সেটা বোঝো?
আমি হয়তো তোমার মতোই একজনকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম।
যে আমাকে নিজের সমস্ত কষ্ট নির্দ্বিধায় বলে দেবে...
অজস্রবার ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও ভেজা চোখে আমার চোখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকবে।
আমাকে খুব করে ভালোবাসবে...
বাউল
কি উপায় বলো না
গুরু, কি উপায় বলো না ...
তুমি সব খোলো, মন খোলো না -
ভেবেছিলাম সঙ্গে যাবো,
সঙ্গে নেবে,
সঙ্গ পাবো...
সং সেজে কাটলো বেলা,
সংগতে আর হলো না...
গুরু, কি উপায় বলো না !