জোনাকির দল কি আজও এসে 'হাজির' বলে যায় ?
ভেসে ভেসে দেহ জ্বেলে আলো দিয়ে যায় ?
বন্ধু, শীতল ছায়ায় এলাম পুরান নদী পার
শিঞ্জিনীর সাথে তার প্রথম আলাপও হয়েছিল এই রাগের হাত ধরেই। হাজরার 'এম. এন. কর্পোরেশনে' ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে টানা আড়াইঘন্টা অপেক্ষা করার পর বসের সুন্দরী পি. এ. এসে জানালো যে বাকিদের ইন্টারভিউ সেদিন আর হবে না, পরে ফোন করে সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে। শুনে অমলেন্দুর পা থেকে মাথার চুলগুলো পর্যন্ত রাগে হিসহিসিয়ে উঠেছিলো। ফেরার সময় ভীড় বাসে এক বয়স্কা মহিলা তার চটির পিছনে এমন ভাবে পা ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো যে নামতে গিয়ে হ্যাঁচকা টানে তার চটির স্ট্র্যাপটাই গেলো ছিঁড়ে ! সেই ছেঁড়া স্ট্র্যাপওয়ালা চটি হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে যাওয়া দেখে কলেজ ফিরতি তরুণী মেয়েগুলো হেসে যেন আর বাঁচে না !! ঝামেলা আর বিপদ কখনো একা একা আসে না। সেটা প্রমান করতেই যেন এসে গেলো আকাশ কাঁপিয়ে টোপা কুলের ঝরে পড়ার মতো বৃষ্টির ঝাঁক। সঙ্গে থাকা ছাতাটার হ্যান্ডেলটাও এই সময় জ্যাম হয়ে গেলো - কিছুতেই সে ব্যাটা খুলতে চাইলো না !! অমলেন্দুর মাথায় তখন রাগের চোটে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে। ছাতা খুলবে না, চটি সামলে দৌড় দিয়ে সামনের কোনও একটা দোকানের শেল্টারে গিয়ে দাঁড়াবে, এই দো'টানায় যখন সে পড়েছে, তখনই তার চোখ টানলো রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকা, লম্বাটে, ছিপছিপে চেহারার একটা মেয়ে --- দু'হাত দু'দিকে সামান্য মেলে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে ইচ্ছা করে ভিজে চলেছে, ঠিক যেন বিরহী যক্ষপ্রিয়া দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম বর্ষার জলের স্বাদ নিচ্ছে। আকাশী-নীল কুর্তিতে ভিজে চুপসে যাওয়া শিঞ্জিনী তার চোখে যেন আবেশের ঘোর টেনে দিলো। অমলেন্দু ভুলে গেলো স্থান-কাল-পাত্র - ভুলে গেলো তার ব্যর্থ ইন্টারভিউ আর ছেঁড়া চটির দুর্গতির কথা। সারাদিনের ক্লান্তি উবে গিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো - অমলেন্দু বুঝতে পারলো তার জীবনের বারোটা বেজে গেলো সেই ক্ষণ থেকেই। আমহার্স্ট স্ট্রিটে অমলেন্দু স্থবির হয়ে দাঁড়িয়েই থাকলো, যতক্ষণ না জল জমে উঠে এসে তার গোড়ালি ছাপিয়ে গেলো !!
[ চলবে... ]