Monday, January 14, 2013

A Trip to Calcutta (December 2012 - January 2013)


ভাবছিলাম, বসে ভাবছিলাম,
   ভাবনার হাতে ভর দিয়ে,  
ভাবনাগুলো কাছে নিয়ে
ভাবছিলামশুধু ভাবছিলাম...



P r e
পৃথিবীর আড়ালে আরো অনেক ছোট ছোট পৃথিবী থাকে। জীবনের ঘোর আর বাস্তবতা মানুষকে সেই পৃথিবীর আড়ালে ঢেকে ফেলে। ততদিনে সময় বদলায়...
নতুন পৃথিবীর ভিন্ন সময়ে মানুষকে ফিরতে হয় প্রকৃতির নিয়মেই। আর সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় চিরচেনা মায়াবী পৃথিবীটাও। আমরা ফিরতে পারি না আমাদের আপনার সেই ভুবনে, স্পর্শ করতে পারি না সেই পুরানো অমল সময় - নিজ দেশে হয়ে দাঁড়াই এক  'এলিয়েন'।  সৃষ্টি হয় আশ্চর্য্য এক স্যাটায়ার...

Recently (Dec 7th - Jan 6th) I visited Calcutta as part of my four week India tour. My last trip to Calcutta was almost four years ago, in 2008, when I lost my beloved Dad. 
No matter how many days of vacation you plan for Calcutta, ultimately it would turn about too short.

Day 0 (Dec 7th, 2012 - Thursday)
I sent the out-of-office email on 1:14 PM (Dec 6th) and left my desk around 4 PM. Our flight, SQ-001 was scheduled to leave from SFO airport on 10:50 PM - rather early! Leaving from office I went to the Milpitas-Walmart to return some of the stuff for my India trip, but soon I decided to come back home since the return-queue was too long and also the behavior of the lady staff there was awkwardly bad.

I was driving back home while cursing on her... but still I was feeling a different kind of joy and happiness. I was going to Calcutta -- my home town, the place where I was born, where my old Mom still lives and keeps longing for me...
I was born & brought up in Calcutta - not in "so called Kolkata". All my education till Masters have been completed here. I left Calcutta for US in year 2000 - almost 12 years back. I keep on going back there because emotionally Calcutta is still my sole home, but also practically my parent(s), rest of my family members and relatives, all live there. But every time I go back home I find there are more and more changes - most of those are in the negative side - more and more high-rising apartment complex, a new bridge has popped up, a road has been turned one-way only, lot more more portholes in the roads, people are more restless, more rude and hassled, many more ruthless incidents, the city a lot more dirtier, more old houses demolished to be replaced by fragile looking multistory buildings, latest shiny mall just next to a slum, another crazy government scheme being tried out, one more useless, destructive 'Bandh' around the corner - the list goes on.

I stare at amazement and let my friends and relatives guide me through the maze of new developments. Walking on the roads I try to identify the old landmarks - some beautiful old house, maybe a tree, an old favorite shop - 99% of the time I find those old symbols are gone - a multi-store or a mobile store or an internet cafe has taken its place. People rush past me but I hesitate, I feel this structure was here only last time I came, so maybe it is still there somewhere - only I cannot find it...

But like every other person away from home I eulogize home a bit too much. When I am away from Calcutta, she is perfection itself - a utopia of my mind. Criticism about her gets me all defensive and ready to fight. But when I visit Calcutta suddenly that rosy picture in my mind gets dimmed and reality takes over. I find the city is not all of joy - rather shabby, downtrodden and extremely badly maintained to my critical eyes.

Lately my sense of disillusionment is tremendous - all I saw around me was fake development - a few malls taking away business from small and medium scale shopkeepers and where middle class Bengali(s) go to confirm their status or some such silly stuff. Few more cine complex which made cinema watching a very prohibitive and expensive affair, some fancy restaurants, more designer/brand opening a show room in the city and some more multi-storied buildings. Funny thing is Calcuttans are seem to be really proud of these. I wonder these are being done at what cost? Who actually gains from these? What about all those middle and lower-middle class people trying to survive in the city? Isn't the city becoming more and more prohibitive for them? What about maintaining the Bengali culture? Isn't it getting lost somewhere in the tussle between the pseudo Bangla speaking communists and the mad rush for globalization?

I know every city in India is going through this transition, but in majority cases all such transitions are balanced with growth, new roads, over bridges, new suburbs, new buses - these things do keep coming up to supplement the other part. Sadly these are not true for Kolkata - here it is all lopsided. Kolkata today has something of the air of a beaten-down rustbelt city in the US - there was a lot of gloom and doom. Millions of muslims people from Bihar, Uttar Pradesh, Jharkhand and other states are gathered here for easy living and making city streets dirty, too noisy and very unsafe. Robbery, pick-pockets, daylight daycoity, murders, accidents, girls molestation are regular incidents on all over the city and happen in multiple numbers per day. The daily news are so, so depressing that I had to stop reading newspaper. The quality of TV programs including Bengali serials, talk-show are so low, I used to watch TV only for playing video games. The city has been hammered - the central government hasn’t exactly showered Kolkata with funds, and while other parts of India have taken off, Kolkata seems to be lagging in all directions.

Too much of introspection?
Let's try to be a bit optimistic... like the mythological phoenix rises only from it's ashes, let's hope our Calcutta will grow to its former glory, regain it's true form and shall continue to stay forevermore the City of Festivals, the City of Joy, আমাদের ফেলে আসা মায়াবী কলকাতা। 
Let me talk about something else about this tour - something which did make us feel good!

আদি গোটা প্লেন-এ মোটামুটি ভালোভাবেই কাটিয়েছিলো - খুব একটা গন্ডগোল করেনি। নিজের সীট থাকা স্বত্বেও ও সীটে না বসে নিচে নেমে নানান টুকিটাকি জিনিসপত্র নিয়ে খালি তুলছিলো আর ফেলছিলো - এটাই ছিলো ওর main খেলা। প্লেন ছাড়া বা নামার সময় ওকে জোর করে কোলে বসিয়ে দুধ খাওয়াতে হচ্ছিলো। এছাড়া আর তেমন কোনো দুষ্টুমি পোহাতে হয় নি। সিঙ্গাপুরে নামার পর গরমে আর ঘামে আমার বেশ মাথা ধরে গিয়েছিলো
কোনো রকমে টার্মিনাল-টুর Ambassador হোটেল রুমে চেকিন করে, স্নান করে বিশ্রাম নেবার পর একটু ভালো লাগছিলো।
তারপর বেরিয়ে টার্মিনাল-টুর ফুড কোর্ট থেকে কিছু খেয়ে নিলাম। টুকিটাকি কিছু জিনিস-ও কিনলাম - দেখতে দেখতে কলকাতার প্লেন ছাড়া সময় হয়ে এলো। হোটেলে ৬ ঘন্টার বুকিং থাকলেও আমরা ৪ ঘন্টার বেশি ঘরে থাকিনি। 


কলকাতার প্লেনে ওঠার সময় একটা অদ্ভুত শিহরণ লাগছিলো - এই সময় আরেকটা নন-বেঙ্গলি ফ্যামিলি-র সাথে আলাপ হয়ে গেলো - তাদেরও একটাই  ছেলে - সে অবশ্য আদির থেকে বেশ কিছুটা বড়ো - কিন্তু দুজনে খুব খেলতে লাগলো একসাথে। আমাদের মতোই ওরাও যাচ্ছিলো কলকাতায় আর থাকে Sunnyvale-ই !!

অবশেষে কলকাতার প্লেনে উঠে বসলাম - আমাদের সীট ছিল একেবারে পিছনে - টয়লেট-এর জাস্ট আগে - এতো বাজে সীট এর আগে কখনো পাইনি। এই জার্নির সময়টাতে আদি বেশ কাঁদছিলো - ওর খুব ঘুম পেয়ে গিয়েছিলো - দুধ খাওয়া মাত্র সেই যে ঘুমালো, জাগলো একেবারে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে দেবযানীদের বাড়িতে গিয়ে! এয়ারপোর্টে আমাদের রিসিভ করতে ওদের গোটা  ফ্যামিলি-ই এসে হাজির। খুবই অপ্রস্তুতের ব্যাপার... 
আমাদের ৬টা  বড় বড়  লাগেজ হয়েছিলো, এছাড়া দুটো কেবিন লাগেজ, একটা স্ট্রলার আর কয়েকটা হ্যান্ডব্যাগ তো ছিলোই, তাই একটা টাটা-সুমো আর আরেকটা Ambassador গাড়ি আনতে হয়েছিলো। মালপত্র তুলে দিয়ে আমি  টাটা-সুমো গাড়িতে উঠে বসলাম। শনিবারের কলকাতার রাস্তায় তখন যথেষ্ঠ ভীড় - একটা বিয়ে কিম্বা বৌভাতের রাত ছিলো সেটা। পিঙ্কির শ্বশুরবাড়ি ঘুরে দেবযানীদের বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১০:৩০ বেজে গেলো। বাড়ি পৌঁছে আদির ঘুম গেল ভেঙ্গে - চারিদিকে সব অচেনা মুখ দেখে সে দুলিয়ে দুলিয়ে ঘন ঘন মাথা নাড়তে লাগলো - আর তার সাথে শুরু হলো কনস্ট্যান্ট কান্না...


First Week:
পরের দিন অর্থাৎ রবিবার আমাদের সোনারপুরের বাড়ির দিকে রওনা হতে হতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো। বিকেল শেষের অন্ধকারে যখন বাড়ি গিয়ে পৌছালাম সব অন্যরকম লাগছিলো। বৈঠকখানায় মা একা শুয়ে শুয়ে TV দেখছেন...একসময় এই ঘর কতো  জমজমাট হয়ে থাকতো - বাবা, পিসিমা আরও কতজনে... আজ পিসিমা নেই, বাবাও নেই। মায়ের নীরব চোখের দিকে চেয়ে নিজেকে বড় অপরাধী বলে মনে হচ্ছিলো  - মনে হচ্ছিলো যেন আসতে আমি অনেক দেরী করে ফেলেছি...  
আদি যথারীতি আবার মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কান্না সুর করে দিলো। ওকে নিয়ে আমি আমাদের বাড়ির শুন্য-প্রায়  দালান আর উঠান ঘুরছিলাম - মনে হচ্ছিলো  আমি যেন টাইম মেশিনে উঠে ভুল করে এখানে চলে এসেছি। যাই হোক প্রথম সপ্তাহটা আমরা আমাদের বাড়িতেই ছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই আদি সবার সাথে মিশে নরমাল behave করতে লাগলো -  মা বয়সের ভারে খুব একটা চলতে পারেন না - তবুও মায়ের সাথে আদির ভাব হতে বেশি সময় লাগেনি।
আমার মায়ের সাথে আদি 
তিন প্রজন্মের এই প্রথম একসাথে দেখা। বাবার অভাব বড়ই অনুভব করছিলাম।
প্রথম সপ্তাহটা কেটে গেলো  দেখতে দেখতেই - লোকাল ব্যাঙ্কে আমার একাউন্ট দেখলাম 'dormant' হয়ে গেছে - সেটাকে revive করতে প্রায় ৪ ঘন্টা লেগে গেলো। বুঝতে পারলাম যে কলকাতা শুধু চালচলন আর ফ্যাশনেই USকে নকল করেছে আর বাদবাকি সব যে তিমিরে ছিলো সেখানেই আছে। 


আমার ছোটবেলায় ডিসেম্বরের আকাশ ভরে থাকতো উড়ন্ত ঘুড়ির ঝাঁকে। সে সময় ছিলো না কোনো ভিডিও গেমস, আই-ফোন বা ফেসবুক। কিন্তু এখন আকাশের দিকে তাকালে কোনো ঘুড়ি চোখে পড়ে না। সারা সোনারপুরে মাত্র একটাই ঘুড়ির দোকান খুঁজে পেলাম - সেখানে আবার প্লাস্টিকের ঘুড়ি ছাড়া অন্য কোনো ঘুড়ি নেই। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু দূরে, বৈকুন্ঠপুরের এক দোকান থেকে ঘুড়ি কিনে আনলাম। কিন্তু হাওয়ার অভাবে ঘুড়ি ভালো করে ওড়াতে পারলাম না। অথচ মনে আছে আমার ছোটোবেলার দিনগুলোতে ডিসেম্বর মাসে কি দারুণই না  হাওয়া দিতো - আর এখন দিনের বেলাতে হাফ-হাতা জামা ছাড়া অন্য কিছু গায়ে রাখা যায় না। সময় শুধু মানুষজন নয়, আবহাওয়াকেও যেন আমূল বদলে দিয়েছে! আমাদের ছাদে এখন প্রচুর ফুলগাছের টব - ঘুড়ি ওড়ানোর জায়গাও তেমন নেই। তবু ছাদে উঠলেই যেন কিছুটা পুরানো দিনগুলোর সন্ধান খুঁজে পেতাম।

বাড়ির ছাদে বসে সকালের খাবার খাওয়া...
এই সপ্তাহে একদিন আমাদের বাড়িতে বাউল গান শোনাতে এসেছিলো  'ননীগোপাল দাস' - হঠাৎই আলাপ, কিন্তু বেশ ভালো লেগে গেলো। গলায় সুর তেমন নেই - কিন্তু মনে ভক্তি অনেক আছে - at least  তাই-ই তো মনে হলো।
বাউল - ননীগোপাল দাস 
হরিদ্বার, বৃন্দাবন, আরো  নানান জায়গায় ঘুরেছেন এই বৈষ্ণব। একসময় ঘোর সংসারী ছিলেন - পরে ঘর-সংসার সব ঝেড়ে ফেলে বৈষ্ণব দীক্ষা গ্রহণ করেছেন আপাতত একটা আশ্রম খোলার চেষ্টা করছেন। নানান কথাবার্তার মধ্যে একবার বললেন: 'বাবু গো, পয়সা থাকলি তো সব ঘোরা যায়, কিন্তু মাহাত্ম্য বুঝা যায় কি? ধাম দর্শন করতি হয় কান দে, মন দে... শুধু চক্ষু দে কি আর ধাম দর্শন হয় !!" অশুদ্ধ ভাষা - কিন্তু কথাটার মধ্যে যেন কোথায় একটা চরম সত্য আর বিদ্রুপের ভাব লুকিয়ে আছে। সত্যি বলতে কি এই কথার ওপরে আমার আর কথা বলা সাজে না - তাই চুপ করেই রইলাম। ইচ্ছা আছে নেক্সট বার কলকাতায় এলে এনাকে সঙ্গে নিয়ে হরিদ্বার বা অন্য কোনো ধর্মস্থানে  যাবো। দেখি দৈব-মাহাত্ম্য অনুভব করা যায় কি না এ পোড়া জনমে।

শুন্য-প্রায় বাড়িতে ঘুরে বেড়াতে খুব একটা ভালো লাগতো না। মন খুঁজে চলতো সেই সব হারিয়ে যাওয়া  দিনগুলোকে, চলে যাওয়া মানুষজনকে।  বাড়ির উঠান, পুকুর, বাগান, গাছপালা - সব কিছুরই জীবন যেন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।  সে এক অসম্ভব কষ্ট - বলে বোঝানো যাবেনা।

অচেনা লোকের দুঃখ-কষ্ট তবু সহ্য করা যায় কিন্তু প্রিয়জনের রুগ্ন অবস্থা দেখার থেকে মনে হয় না-দেখলেই বোধহয় ভালো ছিলো। পরের সপ্তাহটা  আমার দেবযানীদের বাড়িতে থাকার কথা। সেই মতো আমরা শুক্রবারের বিকেলে রওনা হয়ে দিলাম। সোনারপুর থেকে নর্থ কলকাতা অনেকটা রাস্তা - তবুও ট্যাক্সিওলা মিটারে যেতে চাইছিলো না! শেষ পর্যন্ত যেতে রাজি হলেও এমন একটা বাজে আর ঘুরপথ দিয়ে বাইপাসে উঠলো যে প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগে গেলো। বুঝতে পারলাম লোভ আর অসততা সাধারণ মানুষের চরিত্র বেশ ভালো ভাবেই নষ্ট করে দিয়েছে। অথচ সেই ট্যাক্সিওয়ালা ছিল লোকাল আর আমাদেরকে চিনতো ডানলপ-রথতলাতে আবার রাস্তাঘাট এমন বদলে গিয়েছে যে দেবযানী নিজেদের এলাকার রাস্তাটা চিনতে দেরী করে ফেললো - যার ফলে ট্যাক্সির মীটার উঠলো বেশ ভালোই। 
দেবযানীদের বাড়ির অবস্থা আমাদের নিচের তলার ঘরবাড়ির থেকে অনেক ভালো আর মোটামুটি পরিষ্কার। আদি এখানে এসে মহানন্দে খেলে বেড়াতে লাগলো। ঘুম থেকে উঠেই 'দাদান' অর্থাৎ দেবযানীর বাবার কোলে চড়ে ঘুরতে বার হতো - ভৌ-ভৌ আর ম্যাও-পুসি  দেখে ফিরতো।


Second Week:
দ্বিতীয় সপ্তাহটা কেটে গেলো আমার কলকাতার কিছু কাজকর্ম সারতে - সেখানেও একই অবস্থা। মানুষজন যেন নিজেদেরকে নিয়ে খুব ব্যস্ত - কেউ কারুকে কোনো হেল্প করতে চায় না, অথচ অবস্থার সুযোগ নিতে কেউ একটুও দেরী করেনা। অফিস টাইমে মেট্রোতে ওঠা যায় না - চারিদিকে অবাঙালি, বিশেষ করে বিহারী মুসলমানে ছেয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে বার হলে মাঝে মাঝে মনে হতো যে আমি যেন কোনো under developed  বিহারী locality তে চলে এসেছি।এর মধ্যে আমি একদিন "কলকাতা মিউজিয়ামে" ঘুরে এলাম। এটা recently (২০০২ সালে) ওপেন হয়েছে। Main  theme  হলো প্রাক-স্বাধীনতা আমলের আমাদের দেশের নানান শহীদদের আত্মত্যাগ, প্লাস চিরন্তন গ্রাম বাংলার দৈনন্দিন জীবন কেমন ছিলো, ইত্যাদি। একই দিনে ধর্মতলার সিম্ফনি তে একবার ঢু  মারলাম।
ব্যস্ত কলকাতা - ধর্মতলার কাছেই...  
পছন্দের কিছু সিডি পেলাম - বেশিরভাগ-ই পেলাম না। বাংলার থেকে এখানে হিন্দির স্টক এখন অনেক বেশি। দোকানের স্পেস এত ছোট যে ভালো করে দাঁড়ানো যায় না। তার উপর চুরি ধরার জন্যে যত না লোক রয়েছে, কোন সিডি কোথায় আছে তা উত্তর দেবার লোক ততো নেই। কলকাতা বদলেছে অনেক ভাবেই। 

এই সপ্তাহতেই একদিন বেলুড় ঘুরে এলাম - সেখানেও একই অবস্থা। পিপঁড়ের মতো লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। দক্ষিণেশ্বরের ঘাট থেকে নৌকা ওঠার বি-শা-ল  লাইন। ১০-১২ টা নৌকা একসাথে ট্রিপ দিচ্ছে - প্রতিটাতে উঠছে ২০ জন করে - তাও আমাদেরকে প্রায় আধ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। এখানেও দেখলাম কিছু অবাঙ্গালী লোক লাইন না মেনেই জোর করে আগে দাঁড়িয়ে গেলো!
দেবযানীরা কিছু জামাকাপড় কেনাকাটি করবে বলে গাড়ি করে রাস্তা দিয়ে বেলুড়ে পৌঁছালো - আমি আর আমার শ্বশুরমশাই গেলাম নৌকা করে - জলপথে। নৌকা করে যাবার সময় দেখলাম "Second হুগলি ব্রিজ" বা নিবেদিতা ব্রিজ - যার construction হয়েছিলো আমার শ্বশুরমশায়ের তত্বাবধানে।
নিবেদিতা ব্রিজ  
বেলুড়  মঠ 
সেই শান্ত, নির্জন পরিবেশে নৌকার ইন্জিনের ভট-ভট শব্দে আর কাটা-তেলের বিশ্রী কটু গন্ধে মনের মধ্যে যেটুকু ভক্তিভাব জেগেছিল তা নিমেষেই বিলীন হয়ে গেলো। গঙ্গার জলে মানুষের ফেলে দেওয়া আবর্জনা, ঘাটে বসে সাবান দিয়ে জামাকাপড় কাচা, স্নান করা দেখে মনে হলো গঙ্গার এই দুরবস্থার জন্যে আমরাই দায়ী। 
গঙ্গাতে মানুষের ফেলা আবর্জনা 
যাই হোক পড়ন্ত বিকেলের আলোতে বেলুড়ের প্রাঙ্গণে বসে বেশ ভালো লাগছিলো। প্রচুর ভীড় হয়েছিলো এই দিন - এখানেও সেই একই অবস্থা - চারিদিক খালি ভাঙ্গা-ভাঙ্গা অবাঙালি ভাষায় ছয়লাপ।

বেলুড় মঠে কোনো ক্যামেরা ব্যবহার করা যায় না - কিন্তু লোকজন দেখলাম দিব্যি ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে!! কেউ কেউ আবার সবার সামনেই নরমাল point-n-shoot ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করছে।  ফেরার সময় গাড়িতে উঠতেই লেগে গেল প্রায় ২০ মিনিট। ছোট্ট এক লেনের রাস্তায় অন্তত কম করে ১০০ গাড়ি একে অপরকে ওভারটেক করে যাবার চেষ্টা করছে। সবাই ভাবছে জোরে হর্ন বাজালেই সব সমস্যার সমাধান! সে এক বিশ্রী অবস্থা দেখলে হাসিও পায়, আবার কান্নাও পায়! পয়সা থাকলেই তো গাড়ি কেনা যায়, কিন্তু গাড়ি চালানোর রাস্তা? সেটা আসবে কোথা থেকে? তার জন্যে তো চাই একটা ভালো গভর্নমেন্ট আর disciplined administration...



Third Week:
তৃতীয় সপ্তাহটা কম্পারেটিভলি বেশ আনন্দে কেটেছিলো, except আদির Acidity প্রবলেম। একসাথে অনেকে মিলে বেড়াতে যেতে বেশ ভালোই লাগে, কিন্তু সঙ্গে যদি কোনো ছোটো বাচ্চা থাকে তাহলে লাইফ অনেকটা 'হেল' হয়ে যাবার মতই পরিস্থিতি হয়। যাই হোক 'কোথায় যাওয়া যায়' করতে করতে শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো 'মন্দারমণি' গাড়ি ভাড়া আর হোটেল বুকিং-এর দায়িত্ব পিঙ্কির husband, অমিতাভ  নিয়ে নেওয়ায় ব্যপারটা অনেক সোজা হয়ে গেলো। 
Mondarmoni on Google Map

ঠিক হলো রবিবার (Dec ২৩) সকাল ১১:৩০টা নাগাদ আমরা গাড়ি নিয়ে স্টার্ট করবো। তার ঠিক আগের রাতেই ছিলো পিঙ্কিদের বাড়িতে খাওয়ার একটা নেমতন্ন: বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত 
পিঙ্কিদের বাড়িতে খাওয়া  - বেশ Spicy ছিলো 
হয়ে গেলো - তার ওপরে 'চিকেন চাপ'-এর চাপে পরে সেই রাতের বেলাতেই আমাকে বার দুয়েক রেস্টরুমে ছুটতে হলো। পরের দিন সকালে উঠে জিনিসপত্র গুছিয়ে, স্নান টান করে সবাই মিলে রেডি হতে বেশ সময় লেগে গেলো। আল্টিমেটলি বের হতে হতে প্রায় দুপুর দেড়টা বেজে গেলো। টাটা সুমো না নিয়ে আমরা মাহিন্দ্রা-স্করপিও SUV গাড়ি নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা গেলো সেটা টাটা সুমোর তুলনায় সাইজে একটু ছোটোআমরা মোট ছিলাম ৬ জন। আদি বসবে কোলে - তাই পিছনের সীটের একদিকে সব লাগেজগুলো তুলে দিয়ে দুজনে সেখানে বসে যাওয়াতে কোনো প্রবলেম হলো না। কিন্তু আরো একজন লোক যদি যেতো তাহলে সমস্যা হতো। এই গাড়িটাতে আবার MP3 প্লেয়ার চলছিলো  না - শুধু USB কিন্তু আমাদের আনা USB-ড্রাইভটা আবার গাড়ির প্লেয়ার read করতে পারছিলো না - কেন জানি না। তাই ড্রাইভারের আনা USB-তে থাকা গান শুনতে হলো। বেশিরভাগ-ই নতুন যুগের লারে-লাপ্পা গান, তবে বেশ কিছু পুরানো দিনের হিন্দি গানও ছিলো - কিশোর আর লতা-জির গাওয়া। 
মাহিন্দ্রা-স্করপিও SUV 

রবিবারের সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা করে ছিলো, আর ঠান্ডাও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের আলো একটু একটু করে বাড়তে লাগলো। কলকাতা ছাড়িয়ে যাবার পর বরং আকাশে কিছু ঘুড়ি উড়তে দেখতে পেলাম।

মন্দারমণি হাওড়া থেকে ১৮০ কি.মি. দুরে - এবং arguably ইন্ডিয়ার সব থেকে লম্বা সমুদ্রতট (সী-বিচ) - দীঘা  থেকে মাত্র ৩০ কি.মি. আগে। সেকেন্ড হুগলী ব্রিজ ক্রস করে আমরা 'Kona Expressway' দিয়ে NH-৬ অর্থাৎ 'বোম্বে হাইওয়ে' ধরলাম। তারপর কোলাঘাট ব্রিজ ক্রস করে বাঁ-দিকের রাস্তা  (towards দীঘা) ফলো করলাম। যাবার পথে আমরা "শেরে পাঞ্জাব' হোটেলে লাঞ্চ সেরে নিলাম। ছুটির উইকেন্ড - তাই জায়গা পেতেই অনেক
কোলাঘাটের কাছে famous "শেরে-পাঞ্জাব" হোটেল 
সময় লেগে গেলো। তবে রান্নার কোয়ালিটি ছিল বেশ ভালো। আদি এখানে প্রচন্ড দুরন্তপনা শুরু করেছিলো - খালি এর কোল থেকে অন্যের কোলে কোলে ঘুরতে লাগলো।  
আমাদের গাড়ি - পিঙ্কি আর অমিতাভের সাথে 'আদি'  

খাবার পর আবার শুরু হলো আমাদের যাত্রা - গ্রাম বাংলার মধ্যে দিয়ে। একের পর এক গ্রাম পার হয়ে যাচ্ছিলাম - কি অদ্ভুত অদ্ভুত সব নাম: উলুবেড়িয়া, দেউলি, ধুলাগড়, বাজকুল,  মুনিমগড়, বালিহাটি, দোয়ারখোল, কদমবেড়া, পানিয়াড়া, নাচিন্দা,  চাউলখোলা, বালিসাই, রামদা,  কুলগাছিয়া, চাঁদপুর, দাদনপাত্রবাড়, অঙ্কুরহাটি, মেচেদা, তুরুমুনগা, কালিন্দী...  
ধানের গোলা - 'মরাই'
মনে মনে ভাবছিলাম যদি কোনো রকমে এখনকার পিচের রাস্তা-ঘাট আর পাকা ঘরবাড়ি গুলোকে মাটি-র তৈরী রাস্তা, ঘর-বাড়িতে convert করে দেওয়া যায়, তাহলে ৩০ বছর আগেকার গ্রামের সাথে আজকের এই গ্রামগুলোর খুব একটা তফাৎ থাকবেনা।

এই পথ যদি না শেষ হয়...

সেই একই কলা, আম-নারকেল, বাঁশ বাগানের ঝাড়, দিগন্ত বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়া 'আল', মাঠে মাঠে ছেলেদের খেলে বেড়ানো, ঘুড়ি ওড়ানো, গরু-বাছুরের পাল নিয়ে রাখালদের বাড়ি ফেরা। এখানে জগৎ যেন অনেকটাই থমকে আছে। তবে রাস্তাঘাটে এখন অনেক মোটর-বাইক চলাচল করে, তিন-চাকার রিক্সা-ভ্যানগুলোও চলে মোটরে, 'কাটা-তেল' দিয়ে। সাইকেলও আছে, তবে অনেক কম।   
ক্লান্তি নামে গো - সূর্য্য ঢলে গো... 
কাঁথি পৌঁছানোর অনেক আগেই সূর্য্য প্রায় ডোবার মুখে চলে গেলো। পড়ন্ত বিকালের লালচে (ক্রিমসন) আলোয় চোখ-জুড়ানো খোলা মাঠ-গাছপালা দেখে ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে যাচ্ছিলো - জীবন যখন এতো কমপ্লিকেটেড হয়ে ওঠেনি সত্যজি রায়ের 'ফেলুদা'র কথা মতোই দেখলাম কুয়াশা যেন হঠাৎই  'ঝুপ' করে নেমে এলো। দূরের গাছপালার কোমর অবধি আস্তে আস্তে  সাদা ধোঁয়ার চাদরেতে ঢাকা পড়ে যেতে শুরু করলো গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পোশাক-আশাকও দেখলাম প্রায় একই রকম - প্রত্যেকের গায়েই রয়েছে চাদর বা শাল, আর গলায় একটা করে জড়ানো মাফলার। 

২৫শে ডিসেম্বর সামনেই - তাই প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই রাশি রাশি কেক সাজিয়ে রাখা হয়েছে - সব লাল, হলুদ সেলফোন পেপারে মোড়া। গরম গরম জিলিপি, আলুচপ-বেগুনি ভাজা দেখে খুব লোভ হতে লাগলো। কিন্তু এখানে গাড়ি পার্ক করা খুব সহজ কথা নয়। একে তো রাস্তা বেশ সরু, তার উপর প্রচুর গাড়ি চলছে - মনে হয় প্রায় সবাই মন্দারমণি বা দীঘাতে চলেছে বেড়াতে। 

কাঁথি-র কাছাকাছি এসে আমরা কিছু স্ন্যাক্স আর জল কিনে নিলাম - এখন ভালোই অন্ধকার হয়ে গেছে। রাতের ঠান্ডায় কুকুরগুলো সব গুটিসুটি মেরে রাস্তার ধারে জমে থাকা বালির মধ্যে শুয়ে আছে। মন্দারমণিতে যখন এসে পৌঁছালাম তখন already ৭:৩০ বেজে গেছে। আমাদের বুকিং ছিল 'গণপতি প্যালেস' হোটেলে। এখানকার বেশিরভাগ হোটেলগুলোতে সী-বিচ দিয়ে ঢুকতে হয় - কিন্তু আমাদের এই হোটেলটাতে রাস্তা দিয়েই ঢোকা যায়। 
কটেজ রুম 
আমাদের প্রথম রাতের বুকিং ছিলো 'কটেজ রুমে' এছাড়া অবশ্য অন্য কোনো ঘর পাওয়াও যায় নি। এগুলো কম্পারেটিভলি কম পরিষ্কার, দিনের বেলায় মাছির উৎপাত বেশি, কারণ ঘরটা গ্রাউন্ড ফ্লোরে আর রাতে বেশি ঠান্ডা লাগে - তবে ভাড়া একটু কম।  

তিনটে ঘর বুক করা ছিলো - মাঝেরটাতে ছিলাম আমরা। ঘরে রুম হীটার না থাকলেও বাথরুমে গিজার ছিলো - তাই খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয় নি। তবে আদির খাবার গরম করার জন্যে আমাদের হোটেল-বয় কে ডেকে, তাকে দিয়ে হোটেলের কিচেনের মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করতে হয়েছিলো। পরের দিনই অবশ্য আমরা সবাই মেন বিল্ডিং-এর তিনতলার, সী-ফেসিং ঘরে শিফট করে গেছিলাম। সেই ঘরগুলো আরেকটু specious ছিল, আর মাছির উপদ্রব অনেক কম। অবশ্য মাছিগুলো নাকি seasonal - এই সময়টাতেই বেশি হয়েছে, কারণ পাশেই একটা Dry Fish-র আখড়া গজিয়ে উঠেছে।

এই হোটেলে স্টাফদের ব্যবহার ছিলো বেশ ভালো আর খুব ফ্রেন্ডলি। আমরা এখানেই রাতের ডিনার সেরে নিয়েছিলাম। রান্না করেছিলো ভালোই
গণপতি প্যালেসে - ডিনার টাইম...
এখানে ডাইনিং রুমের পাশেই ছোটখাটো একটা স্পোর্টস-রুম ছিলো  - যেখানে বিলিয়ার্ড, ক্যারাম আর টেবিল টেনিস খেলার কিছু সরঞ্জাম ছিলো। খাবার পর সেখানে আমরা কিছুক্ষণ আনাড়ির মতো খেলা শুরু করে দিলাম।
Table Tennis খেলা 
ক্যারামের শট এখনো ভালোই পারি... 
পরের দিন সকালে ঘরেই ব্রেকফার্স্ট সেরে নিয়ে, স্নান করে, আমরা সী-বিচ দেখতে বার হলাম। 

Mandarmoni sea beach has its own uniqueness and beauty. It is probably the longest drive-able beach in India (almost around 18 KM). One can almost invariably drive from the one end of the beach to the other and enjoy an unimaginable  ride. 

আরো দূরে, চলো যাই  
The sea of Mandarmoni is generally not rough and bathing in the sea is of great pleasure. I really don't have much to write about the beach. We did nothing - just relax, relax and relax - so sharing the photographs.
দূরে কোথাও, দূরে দূরে...
আরেকটু বেলা বাড়লে আমরা দীঘার দিকে রওনা দিলাম - যাবার পথে শঙ্করপুর পড়লো। এখান থেকে দীঘা যেতে লাগে ৪০ মিনিটের মতো - তবে রাস্তাঘাট খুবই বাজে। দুটো গাড়ি পাশাপাশি যাবার মতো রাস্তা অনেক জায়গাতেই নেই - তাই আগুপিছু করে যেতে হয়। গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কাঁথি থেকে মেকানিক নিয়ে আসতে হবে। অসুখ বিসুখ হলেও একই ব্যবস্থা - তাই আমরা একটু চিন্তাতেই ছিলাম। কিন্তু Luckily আমাদের সে রকম কোনো ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়নি। 

দীঘাতে পৌঁছে প্রথমেই আমরা লাঞ্চ সেরে নিলাম - পাবদা মাছ, সর্ষে-ইলিশ দিয়ে। তারপর চললাম দীঘার সমুদ্রতটের উদ্দেশ্যে। 
দীঘায় এক রেস্তুরায় লাঞ্চ...
পাবদা আর ইলিশ মাছ 
দীঘা আছে দীঘার-ই মতো - এখানে বেশ, বেশ ভীড় - প্রচুর লোকজন স্নান করছে - বেশ ব্যস্ততা আর কোলাহল।
দীঘাতে আমার এই নিয়ে সেকেন্ড টাইম আসা। প্রথম এসেছিলাম প্রায় বছর ১৪ আগে, অফিস কলিগ-দের সাথে। তখন সল্টলেকে TCGতে চাকরি করতাম। সেই দীঘা এখন অনেকটাই বদলে গেছে। এখন সী-বিচে বসে সমুদ্র দেখার জন্যে সার দিয়ে দিয়ে অনেক চেয়ার পাতা থাকে । সী-বিচে অনেক খুচ-খাচ মোবাইল খাবারের স্টলও হয়েছে। এখানে এলেই আমার মনে পড়ে যায় 'পিন্টু ভট্টাচার্যের' গাওয়া সেই পুরানো দিনের অবিস্মরণীয় রোমান্টিক গান: 'চলো না দীঘার সৈকত ছেড়ে ঝাউ বনের ছায়ায় ছায়ায়...' এরকম তীব্র, মন খারাপ করা, নস্টালজিক গান আমাদের পরের প্রজন্মেরা আর কখনো পাবে বলে মনে হয় না। ঝাউ বন নিয়ে আরেকটা বিখ্যাত গান ছিলো 'দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের' গাওয়া: 'ঝাউ বনটাকে পেরিয়ে পায়ে পায়ে যে পথটা গেছে পাহাড়ের কাছাকাছি, তুমি সেখানে আসবে বলেই আমি বসে আছি...' এছাড়া 'তরুণ বন্দোপাধ্যায়ের' গাওয়া: 'চলো রীণা, ক্যাসুরিনার ছায়া গায়ে মেখে...' তো এক সময় খুবই পপুলার হয়েছিলো। "ক্যাসুরিনা" বলে যে কোনো গাছ থাকতে পারে, তা এই গান শোনার আগে জানতাম না। In fact "চলো রীণা" যে দুটো আলাদা আলাদা শব্দ, অর্থাৎ গানের নায়িকার নাম যে "রীণা", সেটা উপলব্ধি করতেই অনেক সময় লেগে গেছিলো! এই রকম অসাধারণ আর অভিনব শব্দ-চয়ন আজকালকার নামীদামী জীবনমুখী বা ব্যান্ড-এর গীতিকারদের স্বপ্নেতেও আসে কিনা সন্দেহ। আগে আগে অস্বাভাবিক ভালো লাগতো এই সব গানগুলোকে। এখনও লাগে, তবে আগের মতো অতো শিহরণ আর জাগে না - হয়তো বয়স বেড়ে গেছে অনেকটা - স্মৃতিশক্তির মতোই  অনুভুতি গুলোও ভোঁতা হয়ে উঠেছে ।  
সারি সারি ঝাউ বন...
এখানে আমরা বেশ কিছুক্ষণ বসে বসে সমুদ্রের দস্যিপনা দেখলাম - তারপর কিছুক্ষণ বেলুন-ফাটানো টার্গেট প্রাকটিস করলাম - surprisingly আমার success rate ছিলো চোখে পড়ার মতো! 
সী-বিচ থেকে দেবযানী একটা গোল মতো শাঁক কিনলো...আর ফেরার পথে দোকান থেকে একটা বাহারি মাদুর আর শৌখিন সাইড ব্যাগ।

এই সব শাঁখ আসে মাদ্রাজ থেকে - এগুলো দীঘার নয়...
বেলা পড়ে গেলে আমরা রওনা হলাম মন্দারমণির পথে। সেই সন্ধ্যায় মন্দারমণির সমুদ্রসৈকতে, 'Rose  Valley'-র সামনে চলছিলো 'সমুদ্র উৎসব' - গান-বাজনার অনুষ্ঠান। "লেসার রে" দিয়ে সাজানো হয়েছিল গানের মঞ্চ। Z-Bangla নাকি গোটা অনুষ্ঠানটা স্পনসর করেছিলো। 
সমুদ্র উৎসব  - Courtesy Z-Bangla   
আগের সন্ধ্যায় নাকি শতাব্দী রায়, তাপস পাল ও আরো কিছু বিখ্যাত সিনেমা জগতের লোকজনেরা এসেছিলেন। আজকের সন্ধ্যায় আরও কিছু বিখ্যাত লোকজনের আসার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা এখানে বেশীক্ষণ থাকিনি - বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিলো।
দাদানের সথে আদি 
হোটেলে ফেরার পথে যেখানে সী-বিচ থেকে মেন ল্যান্ডে উঠতে হয়, সেখানে অনেক ছোটখাটো খাবারের দোকান ছিলো। এরকম একটা দোকান থেকে আমরা সবাই মিলে গরম গরম চা আর পমফ্রেট মাছ ভাজা খেলাম। আমি আর দেবযানী আবার 'ভ্যানে করে বিক্রি করা' ফুচকাও খেলাম - বেশ ভালো বানিয়েছিলো। 
মাছভাজা খাওয়া...
হোটেল রুমে ফিরে গল্পগুজবের মধ্যে সেই রাতটা কেটে গেল ঝট করেই! রাতের ডিনার আগের রাতের মতোই  হোটেলেই সেরে নিলাম।
নিছক আড্ডা... 
পরের দিন দুপুরে আমাদের বাড়ি ফেরার পালা - বেশ মন খারাপ লাগছিলো। মাত্র দু-রাতের ট্যুর হলেও সময়টা যে এত তাড়াতাড়ি কি করে শেষ হয়ে গেলো  তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। হোটেলের পাওনা টাকা পয়সা সব মিটিয়ে

হোটেল থেকে বাড়ি ফেরার সময়...
দিয়ে আমরা রওনা হলাম সী-বিচের একদম বাঁদিকের মোহনার দিকে যাবো  বলে সী-বিচের দু-প্রান্তের দুই মোহনার আলাদা আলাদা নাম আছে - একদিকের নাম 'জলদা  মোহনা' আরেক দিক, অর্থাৎ যে দিকে গেছিলাম সেটার নাম যে কি ছিলো, সেটা এখন ভুলে গেছি।

মোহনার কাছাকাছি বালির  তট খুব একটা শক্ত নয় - অনেক জায়গাতেই ডেবে ডেবে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই ড্রাইভার মোহনার খুব একটা  কাছে যেতে চাইছিলো না - কিন্তু আমরা মোটামুটি এক রকম জোর করেই গেলাম। একটাই ভরসা গাড়ির চাকাগুলো ছিলো বেশ চওড়া। 
তবে, জায়গাটা ছিলো অস্বাভাবিক সুন্দর। অন্যান্য সী-বিচের সাথে এই জায়গাটার  কোনো তুলনাই হয় না। আমরা বেশ অনেকক্ষণ এখানে ঘুরে ঘুরে বেড়ালাম - সুন্দর ছোটো ছোটো বেশ কয়েকটা ঝিনুক কুড়িয়ে পেলাম
নির্জন সী-বিচের এইখানে দেখলাম লাখ-লাখ লাল কাঁকড়ার সারি - গাড়ির চাকার আওয়াজে বা কাঁপুনিতে এরা পড়ি-মড়ি করে যে যার মতো গর্তে ঢুকে গেলো। ঠিক যেন ম্যাজিকের মতোই মুহুর্তের মধ্যে জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেলো।
এই কাঁকড়া গুলো নাকি খাবার জন্য নয় - তাই এখনো টিকে আছে। আগে নাকি দীঘার সৈকতেও এদের দেখা মিলতো। কিন্তু মানুষজনের আধিক্যে সেখানে আর এদের দেখা যায় না। মন্দারমণিতে মোহনার কাছাকাছিই শুধু এদের দেখা যায় - জানিনা আরও কয়েক বছর পরে আর এদের দেখা মিলবে কিনা। গাড়ি থেকে নেমে, পা টিপে-টিপে গিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম। নিচের গোদা কাঁকড়াটা পালাতে গিয়েও পালাতে পারেনি - কারণ ওই গর্তটা ওর  শরীরের  তুলনায় ছিলো বেশ ছোটো !!
২৫শে ডিসেম্বর বলে প্রচুর লোক সী-বিচে পিকনিক করতে এসেছে - কেউ কেউ দেখলাম গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়েও এসেছে। সী-বিচে বসেই রান্না করছে, নোংরাও হচ্ছে - কিন্তু কোনো পুলিশ ধারে কাছে দেখতে পেলাম না। 
তারপর আমরা ফিরে চললাম কলকাতার দিকে - সেই একই পথ। মাঝখানের দু দিন যে কোথা দিয়ে কেটে গেল কে জানে!
সী-বিচ থেকে ওঠার পথ  - আগে অনেক গাড়ির চাকাই এখানে বসে যেতো 
সন্ধ্যা, নেমে এলো যে সন্ধ্যা - যেন ধরা'র দু'চোখে-তে তন্দ্রা...
ফেরার পথে ড্রাইভার আমাদের 'সানন্দা' বলে এক রেস্ন্তরায় নিয়ে এলো  - সেখানেই আমরা লাঞ্চ সেরে নিলাম। 'থালি সিস্টেম' - এখানেও খাবারের স্বাদ ছিল বেশ বেশ ভালো।
ফেরার পথটা মোটামুটি নির্বিঘ্নেই কেটে গেলো - কলকাতায় ঢোকার পর জ্যামের ঠেলায় বুঝতে পারলাম যে আমরা আবার বাস্তব জগতে ফিরে এসেছি।

এই সপ্তাহের শেষ দিকে, রবিবার (Dec ৩০) দুপুরে আমাদের সোনারপুরের বাড়িতে একটা ছোটখাটো GetTogether-এর আয়োজন করা হয়েছিলো।  ছোটদা আর সেজ বৌদি-ই উদ্যোগী হয়ে সব আয়োজন করেছিলেন। রান্নার দায়িত্বে ছিলো আমার বড়-মেজদাদের চেনা-শোনা এক ক্যাটারার। দুপুর বেলার খাওয়া - মেনু ছিলো:  বিরিয়ানী, ফিস ফ্রাই, চিকেন চাপ, চাটনি আর রসগোল্লা-সন্দেশ। ঐদিনই আবার আমাদের এলাকায় সকাল ৬টা থেকে ১১টা  অবধি লোডশেডিং ছিলো - যার জন্যে খাবার রান্না করে আনতেও বেশ দেরী হয়ে গেছিলো। খেতে খেতে  সেদিন প্রায়  তিনটে বেজে গেছিলো।  প্রায় জনা ২৫ আত্মীয়রা  এসেছিলেন - অনেকেই আবার আসেনি।
Get Together - Demember 30th
খাওয়ার পর সবার সাথে বসে গল্প করতে বেশ ভালো লাগছিলো। মেজদা আর রমেনদা এসেছিলেন রাতের দিকে। মেজদার সাথে বহুদিন বাদে দেখা - অনেক হাসির গল্প হয়েছিলো সেদিন। 
মেজদা এসেছিলেন রাত করে...
পরের দিন অর্থাৎ সোমবার আমরা দেবযানীদের বাড়ির দিকে রওনা হলাম। যাবার পথে যাদবপুরের 'রাম ঠাকুরের' আশ্রম ঘুরে এলাম। এই প্রথম আমরা আদিকে নিয়ে গুরুদেবের আশ্রমে এলাম।
যাদবপুরের রামঠাকুরের আশ্রম 



Fourth(লাস্ট) Week:
প্রতিবারের মতোই কলকাতায় শেষ সপ্তাহটা কাটে প্রচন্ড মন খারাপের মধ্যে দিয়ে। আগে আগে তবু অফিসের পড়ে থাকা কাজকর্মের জন্যে চিন্তা হতো - কিন্তু ইদানিং মনে হয় সবই 'নিমিত্ত মাত্র'।

আমাদের সময়ে জানুয়ারী ফার্স্ট Day পাবলিক হলিডে ছিলো। কিন্তু এখন নাকি  সেটা অনেক জায়গাতেই নেই কি অদ্ভুত, সারা বিশ্ব যা মেনে চলে আমরা তা মানিনা! যা মানার দরকার নেই সেটা কিন্তু ঠিক মানি! 
যাই হোক, ইচ্ছা ছিলো এই দিন আমরা, অর্থাৎ দেবযানীদের বাড়ি থেকে সবাই মিলে বাইরে কোথাও খেতে যাবো। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি। এই সময় আবার আদির বেশ acidity প্রবলেম হচ্ছিলো। তাই সবাইকে বলে কোনো প্ল্যান করা আর হয়ে ওঠেনি। 
শেষ পর্যন্ত আমরা আর পিঙ্কি-রা মিলে গেলাম - ট্যাংরা অর্থাৎ 'চায়না টাউনে'। আদিকে বাড়িতেই রেখে এলাম। TCG-তে চাকরি করাকালীন এখানে বহুবার খেতে এসেছি। আসার পথে দেখলাম বেশ কিছু নতুন রাস্তা তৈরী হয়েছে, আরো কিছু হচ্ছে। সায়েন্স সিটিতে এই দিন বেশ ভীড় ছিলো। বেশ কিছুটা পথ ঘুরে ট্যাংরায় এসে আমরা 'Big  Boss'-এ খেলাম। 
China Town (ট্যাংরা) 
Indian Chinese - 'লা জবাব'...
খাবারের স্বাদ ছিল বেশ বেশ ভালো - সেই পুরানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। খাবার শেষে আমরা "মানি স্কয়ার" থেকে ঘুরে এলাম - বেশ কিছূ শপিং করেছিলাম। ফেরার পথে ট্যাক্সি পেতে অনেক ঝামেলা হলো। প্রায় দৌড়ে দৌড়ে  ট্যাক্সি ধরতে হলো। 
মানি-স্কয়ারে...
USA-র অন্যতম ফ্লপ খাবারের দোকান - কিন্তু কলকাতায় চলে রমরম করে !
মানি স্কয়ারের "লিটল শপ' দোকান থেকে আদির জন্যে অনেক কিছু কেনা হলো। এখানেও দেখলাম "Gerber"-এর Baby Food পাওয়া যাচ্ছে - কিন্তু  অস্বাভাবিক বেশি দাম। যে খাবার আমি USA-তে ২-ডলারে কিনি সেই খাবার এরা বিক্রি করছে প্রায় ৫০০ টাকায়  - অর্থাৎ প্রায় ১০ ডলারে !!!   
এই সপ্তাহে শুক্রবারের রাতে দেবযানীদের বাড়ি থেকে সবাই মিলে ডানলপের 'Ambrosia' বলে এক রেস্তুরায় খেতে গেলাম। এখানে খাবারের কোয়ালিটি তেমন ভালো ছিলো না - কিন্তু ধারে-কাছে আর ভালো কোনো রেস্তুরাও ছিলো  না। যাবার দিন এগিয়ে আসছে বলে আবার আদিকে নিয়ে রাতে কোথাও  আর বেরোতে চাইছিলাম না। মোট তিনটে ফ্যামিলি-র আসার কথা ছিলো  - কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু ওর মনিমামার ফ্যামিলিই এসেছিলো। 
Dunlop-র Ambrosiaতে ডিনার খাওয়া 

আমাদের কলকাতা থেকে প্লেনে ওঠার কথা ছিলো রবিবার রাতে (Jan ৬) - এর আগের দিন অর্থাৎ শনিবার দুপুরে আমরা সবাই মিলে দক্ষিণেশ্বরের মা-কালীর মন্দিরে ঘুরে এসেছিলাম। পূজা দেবার ইচ্ছা থাকলেও এত বি-শা-ল লাইন ছিলো  যে আমরা শুধু মায়ের মুখ দর্শন করেই ফিরলাম।  
মায়ের দেখা মিলে ছিলো  - ক্ষণেকের জন্যে...
মায়ের মন্দিরের প্রধান দরজার উল্টোদিকে জটলার মধ্যে থেকে আমরা উঁচু হয়ে হয়ে মায়ের মুখ দেখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু একদম-ই দেখা যাচ্ছিলো  না। ওখানেই সবাই জটলা পাকাচ্ছিলো। সবে যখন ভাবছিলাম যে এবারেও মায়ের মুখ না দেখেই ফিরে যেতে হবে, ঠিক সেই সময়েই হঠাৎ দরজার সামনে থাকা গার্ডরা সব লোকজনদের মিনিট খানেকের জন্যে সরিয়ে দিলো, আর মায়ের মূর্তি পরিষ্কার আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠলো। আমরা সবাই মিলে জোর গলায় "জয় মা, জয় মা" বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। একেই হয়তো বলে "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর.."

মন্দিরের মধ্যে ক্যামেরা ব্যবহার করা যায় না - চারিদিকে সিকিউরিটি গার্ড প্রচুর ঘুরে বেড়াচ্ছে - তবুও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু ফটো তুলে নিয়েছিলাম। আমার মতো অনেককেই দেখলাম ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলতে। 
শিব মন্দিরের সারি ...
এরপর আমরা ওখানে বারো শিব ঠাকুরের মন্দির আর রাধা-কৃষ্ণের মন্দির দর্শন করে বার হয়ে এলাম। আমি মাতৃশক্তি বলে একটা ম্যাগাজিন কিনে নিলাম।
তারপর সামান্য কিছু কেনাকাটি করে আমরা কাছের এক খাবারের দোকানে কচুরি-ডাল-মিষ্টি দিয়ে লাঞ্চ সেরে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। 
আদি সঙ্গে থাকার জন্যে আমরা গাড়ি ভাড়া করে গেছিলাম। ফেরার পথে আমি আর দেবযানী গাড়িতে করে না ফিরে একটু ঘুরে-ফিরে, রিক্সা করে বাড়ি ফিরলাম। 
দক্ষিনেশ্বরের মন্দিরের কাছে...
এই চত্বরে দেখলাম প্রচুর আচারের দোকান আছে। কত সব অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিষের আচার। এর আগে আমি কখনো 'বাঁশের আচার' খাই নি। এবারেই প্রথম ট্রাই করলাম - বেশ অন্যরকম খেতে। এটা নাকি সুগারের অসুখে হেল্প করে। অন্য আরেক দোকান থেকে আমরা ছোট্ট একটা দূর্গা ঠাকুরের মাটির মূর্তি কিনলাম। 

ফেরার পথে আমরা বার বার করে মায়ের মন্দিরের দিকে ফিরে তাকালাম - যাতে আবার ফিরে আসতে পারি। পরের দিনই আমাদের কলকাতা ছেড়ে চলে আসার কথা - তাই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো।  

Resource (গান @YouTube):