Thursday, August 27, 2015

Disneyland - The Happiest Place on Earth

আশি বা নব্বুইয়ের দশকে যারা বড়ো হয়েছে তারা টেলিভিশনের দৌলতে 'ডিসনী'-র ক্লাসিক সিনেমাগুলি, বা অন্তত: মিকি-মাউস বা লায়ন কিং-এর সাথে মোটামুটি পরিচিত।  এ জগতে কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে গেলে বড়োরা আপনা-আপনিই 'ছোট্ট' হয়ে যায় - ছোট হবার জন্যে আলাদা করে 'ভান' করতে হয় না। ওয়াল্ট ডিসনীর ডিসনীল্যান্ড হলো তেমনই এক স্বপ্নের জগৎ।

~~~ Disneyland - The Happiest Place on Earth ~~~
তবে সত্যি কথা বলতে কি ডিসনীর এই The happiest place on earth”-এ ঢুকতে গেলেই কিন্তু স্বপ্নটা একটু বেশ জোর ধাক্কা খেয়ে যাবে, কারণ এর টিকিট price দেখে। ডিসনী-পার্ক আর ডিসনী-রিসর্ট থেকে আসা রেভেনিউ ক্রমাগত বিপুল হারে বাড়তে থাকা স্বত্তেও ডিসনীল্যান্ড টিকিটের দাম এ'বছরে তিন অঙ্কের ডলার ছুঁয়েছে (ইয়েএএএএ!!!!- তাও এটা শুধু একদিনের, একটাই মাত্র পার্কে ঢোকার মূল্য! দুটো পার্কে ঢোকার টিকিট একসাথে কিনলে বা তিনদিনের টিকিট একসাথে কিনলে সামান্য কিছু ছাড় মেলে, এছাড়া আর কোনও ডিসকাউন্ট এখানে নেই। গুজব আছে যে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই টিকিটের এই আকাশচুম্বী দাম করেছেন যাতে ডিসনীল্যান্ডে দর্শকের ভীড় কিছুটা কম হয় - কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে ডিসনীল্যান্ডে গতবছর 16.2 মিলিয়ন দর্শক এসেছেন - যা কিনা 2012-র তুলনায় 1.5% বেশি!!  বেবিফুডের চাহিদার মতোই বাবা-মা-রা তাঁদের ছোট ছোট সন্তানদের মুখে হাসি আনানোর জন্যে যতো দামী টিকিটই হোক না কেন, তা ঠিকই কিনে ফেলেন, আর ক্যাপিটালিস্ট ডিসনী কর্তৃপক্ষ সেটা এতোদিনে ভালো করেই বুঝে গেছেন। সে যাই হোক এই লোভী ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি কুনজর আর না-বাড়িয়ে বরং এবারে আসা যাক আমার সাম্প্রতিকতম ডিসনীল্যান্ড বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কাহিনীতে।     


পপুলার যেকোনও 'লং উইকেন্ডে' ডিসনীল্যান্ড গেলে ভীড়ের চোটে সেখানে সারা দিনে গোটা চার-পাঁচেকের বেশি রাইডে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনা - এমন কি কয়েকটার 'ফাস্ট পাস' যোগাড় করলেও নয়। কিছু কিছু অত্যাধিক পপুলার রাইডে আবার 'ফাস্ট পাস' থাকে না, তাই সেই গুলোতে ঘন্টা'ভর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায়ও থাকে না। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে খাবারের সন্ধানে গেলেও সেখানে বিশাল লাইন - এমন কি অতি সাধারণ জল-স্ন্যাক্স-সফ্ট ড্রিঙ্কস-আইসক্রিমের জন্যেও !! অবশ্য প্রচুর এনার্জিটিক লোকজন, যারা কিনা পার্ক খোলার আগে গিয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে যান, কিম্বা যাঁরা হুইল চেয়ারে বসার সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য লাভ করে থাকেন, তাঁদের কথা এখানে ধরা হচ্ছে না। মূলত: এই ব্যাপারটার দিকে খেয়াল রেখে এবং আরো কিছু 'টেকনিক্যাল সমস্যার' জন্যেই এ'বছর আমরা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি এক নন-পপুলার weekdays-এ (সোম থেকে বুধবার) ডিসনীল্যান্ড ঘোরার প্ল্যান করেছিলাম। মূল উদ্দেশ্য ছিলো একটাই - ভীড় এড়ানো, এবং ডিসনীল্যান্ডের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে হয়ে থাকা কিছু স্পেশাল ইভেন্ট/শো দেখা - যতোটা বেশি সম্ভব। তো দেখা গেলো ভীড় এড়ানো আদৌ সম্ভব হয়নি - হয় এখানকার লোকসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, কিম্বা হয়তো সবাই আমাদের মতো চিন্তা করে উইকেন্ডে না এসে weekdays-ই এসে পড়েছে! নেক্সট, স্পেশাল ইভেন্ট কয়েকটা দেখা গেলেও বেশি রাইড নেওয়া সম্ভব হয় নি, কারণ এখানে বেশীরভাগ রাইডে ওঠার জন্যে মিনিমাম একটা হাইট থাকতে হয়, যেটা হলো কিনা "চল্লিশ ইঞ্চি" - ক্ষেত্র বিশেষে সেটা বেড়ে গিয়ে "আটচল্লিশ ইঞ্চি"-ও (চার ফুট) হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যার জন্যে মূলত: এই ট্রিপে আসা, অর্থাৎ আমার পৌনে-চার বছরের নেক্সট জেনারেশানের হাইট এখনো আটত্রিশ ইঞ্চির বেশি হয় নি !! অগত্যা বেশ অনেককটা পছন্দসই রাইডেই আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।  

~  ~  ~   *   ~  ~  ~

ড্রাইভ করে বে-এরিয়া থেকে LA যেতে গেলে 
'Interstate 5' বা সংক্ষেপে I-ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই - 101-South ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে, গিলরয়ের কাছে গিয়ে CA-152 East নিতে হয়। এই রাস্তায় মাইল চল্লিশেক যাবার পর I-5-র দেখা মেলে। এই I-5 অনেকটা স্কেলের মতোই এক্কেবারে সোজা দু-লেনের হাইওয়ে। অ্যাতোটাই সোজা যে চালাতে চালাতে চোখে ঘুম আসতে বাধ্য ! কিন্তু তা স্বত্তেও এই হাইওয়েতে আমি খুব একটা অ্যাক্সিডেন্ট দেখিনি। আমার কাছে অবশ্য এক-লেনের CA-152E-তে ওই মাইল চল্লিশেক ড্রাইভ দারুন ভালো লাগে। দু'ধারে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে, ঢেউয়ের মৃদু দোলার মতো দুলতে দুলতে, এঁকে বেঁকে যাওয়া - পথের পাশে থাকা ফ্রেশ ফলমূলের দোকান, সবুজ গাছেদের বাহার, ফার্ম হাউসে ঘোড়াদের চরে বেড়ানো, দিগন্ত বিস্তৃত নাম-না জানা কতো কিছুর চাষের ক্ষেত মনকে ভালো করে দিতে বাধ্য !   
Valley in Green !
Highway CA 152E between Gilroy and Interstate 5

পথের আঁকেবাঁকেই চোখে পড়ে যায় নয় মাইল লম্বা বিখ্যাত 'সান লুইস রিসার্ভার', যা কিনা ক্যালিফোর্নিয়ার 
পঞ্চম বৃহত্তম রিসার্ভার...

I-5-এ ওঠার পর দেখা গেলো গাড়ির সামনে বসে থাকা আমরা দু'জন ছাড়া বাদবাকি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে - বাইরে টেম্পারেচার দেখাচ্ছিলো 100 ডিগ্রী ফারেনহাইট - মানে যাকে বলে চাঁদি-ফাটা গরম, কিন্তু গাড়ীর এয়ারকন্ডিশনের দৌলতে তেমন কিছু আমাদের মালুম হচ্ছিলো না। I-5-এ খাবারের দোকানের সংখ্যা বেশ কম, মাইল কুড়ি-তিরিশেক অন্তর অন্তর খানকয়েক ফাস্ট ফুডের দোকান আর পেট্রোল পাম্পের দেখা মেলে। বেড়াতে বার হলে Dennys হলো গিয়ে আমাদের প্রিয় খাবারের রেস্তোরাঁ, কারণ এখানে মোটামুটি সব বয়সীদেরই খাবার পাওয়া যায়, আর বসার জন্যে বেশিক্ষণ ওয়েট করতে হয় না, যদিও খাবার সার্ভ করতে ভালোই সময় নিয়ে নেয়। দুপুর গড়িয়ে যাবার পর সামান্য ক্ষিদে পেতে লাগলো, কারণ সকালে ব্রেকফাস্ট কিছুই করে আসিনি। সেই মতো Dennys-র খোঁজে চোখ রেখে চললাম, কিন্তু মাইল কুড়ির মধ্যেও কিছু চোখে পড়লো না - অগত্যা আমরা একটা ম্যাকডোনাল্ড দেখে exit নিলাম। দেখা গেলো সেই একই ম্যাকডোনাল্ডে এর আগেও আমরা বহুবার থেমেছি!! ম্যাকডোনাল্ডের পাশেই রয়েছে "Apricot Tree" বলে একটা 
রেস্তোরাঁ। দেখে ভদ্রস্থ বলে মনে হলেও এর আগে কোনোবারই আমরা সেখানে যাই নি, কারণ, 'না-জানি  কেমন খাবার হবে ' এই ভয়ে!! এইবার সেই jinx ভাঙার সাহস অন্তত: দেখা গেলো। সুতরাং আমরা সবাই মিলে চললাম সেই "Apricot Tree" রেস্তোরাঁর দিকে। গাড়ি থেকে নামার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই টের পেলাম 'দাউদাউ গরম' কাকে বলে!!

Apricot Tree Restaurant @ 46272 W Panoche Rd,  Firebaugh, CA 93622
"Apricot Tree" রেস্তোরাঁটা হলো Harris Ranch পেরুনোর প্রায় ৩০ মিনিট বাদে Pacheco Road exit-এর উপরে। মূলত:  Apricot Pie-এর জন্যে এরা বিখ্যাত হলেও এখানে Dennys-এর মতোই প্রায় সবরকমের ফ্যামিলি স্টাইল খাবার পাওয়া যায়, আর দামও প্রায়  Dennys-এর মতোই। এর আগে আমরা এখানে খেতে আসিনি ভেবে এবার নিজেদেরই একটু বোকা মনে হলো। দোকানে বসে থাকা কাস্টমারদের সিংহভাগই টিপিক্যাল অ্যামেরিকান - আমাদের মতো এশিয়ানদের দেখে তারা যেন একটু অবাক চোখে তাকাতে লাগলো। দুটো টেবিল জোড়া করে আমরা সাতজনে মিলে বসে পড়লাম। দেওয়ালের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখা গেলো সর্বত্র, literally everywhere, নানান রংযের, বিচিত্র বাহারের, বিচিত্র ডিজাইনের লাঞ্চবক্স আর থার্মোফ্লাস্কে ভর্তি - বেশিরভাগ 1950-র দশকের!! খাবার টেবিলের উপরে থাকা ছাদের বীমেতেও থরে থরে সাজানো রয়েছে পুরানো আমলে, ভিনটেজ সব লাঞ্চবক্স। বোঝা গেলো এটাই এই রেস্তোরাঁর বৈশিষ্ঠ্য - দোকানের মালিকের অনন্য চিন্তাশক্তির তারিফ করতেই হয় !! 
Vintage lunchboxes on display at The Apricot Tree Restaurant...


ঢোকার মুখেই থাকা ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা খাবারের মেনু 
ক্ষিদের চোটে একগাদা খাবার অর্ডার করে দেখা গেলো একজনের অর্ডারেই প্রায় দু'জনের দিব্যি চলে যায় - অন্তত: আমার মতো স্বল্পাহারী ভেতো বাঙালীর পক্ষে তো বটেই। অনেক কিছু খাবার নষ্ট করে আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম - এবার আমার গাড়ি চালানোর পালা - I-5-এ তখন চোখ ঝলসানো রোদ্দুর...

গাড়ির অ্যাক্সিলেটারে পা-দিতেই গাড়ি গোঁ-গোঁ করে উঠলো, যেন বলতে চাইলো যে "চললে কিন্তু থামতে পারবো না হে বাপু " !! সাতজন প্যাসেঞ্জার, প্লাস তাদের লটবহর নিয়ে গাড়ির 'ভার' এখন যথেষ্ঠই বেশি। গাড়ির রিয়ার-ভিউ মিররগুলো অ্যাডজাস্ট করে, ব্রেকের পজিশানটা ভালো করে 'ফীল' করে নিয়ে, মনে মনে বার কতক 'দুগ্গা-দুগ্গা' আউড়ে চলতে শুরু করে দিলাম। এবারই প্রথম দেখলাম যে I-5 South-এ বেশ কিছু জায়গায় বাঁ-দিকের লেনটা বন্ধ করে দিয়ে, Y-এর মতো আরেকটা টেম্পোরারী রাস্তা তৈরী করে দেওয়া হয়েছে - সম্ভবত: অরিজিনাল বাঁ-দিকের লেন ভালোমতো মেরামত হচ্ছে, যার জন্যে Y-র দুই বাহুর junction-এর কাছে একটা জটলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এরকমই একটা জটলায় পড়ে প্রায় ধাক্কা মারতে গিয়েও মাত্র কয়েক ফুটের জন্যে বেঁচে গেলাম - নিশ্চয় কোনো এক আহাম্মক ওই junction-এর কাছে গিয়ে 'ভ্যাবলা' বনে গেছে !!  আমাদের ভ্যান কিঁ-ই-ই-চ করে জাস্ট কোনমতে থেমে গেলো। 'দুগ্গা' নামের মাহাত্ম্য যে এই কলিকালেও আছে, তা জেনে বেশ খুশিই হলাম। এর পরে বাঁ-দিকের লেন ছেড়ে দিয়ে ডানদিকের লেন দিয়েই চলতে শুরু করে দিলাম। এর পরেও আরো কয়েকটা একই রকমের Y junction দেখলাম, কিন্তু ডানদিকের লেনে থাকায় তেমন কোনো অসুবিধায় আর পড়তে হলোনা। ১৩০ মাইলের মতো যাবার পর আমরা একটা গ্যাস স্টেশনে থেমে, গা-হাত-পা ছাড়িয়ে নিয়ে আইসক্রীম, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়ে নিলাম। ড্রাইভারও বদল হলো এই তালে। এর পরের রাস্তাটুকু বেশ নির্বিবাদেই কেটে গেলো - তবে রাস্তায় ভালোই ট্র্যাফিকের দেখা মিললো। যাবার পথে একটা সী-বীচঘুরে যাবার প্ল্যান করা হয়েছিলো, কিন্তু LA পৌঁছুতেই বেশ দেরী হয়ে যাওয়ায় সেটার প্ল্যান বাতিল করতে হলো। আমাদের হোটেল বুক করা হয়েছিলো "Marriott"-এ - 1460 S Harbor Blvd-এর উপরে - চার রাত থাকার কথা এখানেই। ডিসনীল্যান্ড পার্ক এই হোটেল থেকে হাঁটাপথে মাত্র পাঁচ মিনিট !! 
Marriott @ 1460 S Harbor Blvd, Anaheim, CA 92808
ইন্টারনেটে হোটেলের ছবি দেখে, বা রুমরেটের বহর জেনে মনে দ্রুত সম্ভ্রম জেগে ওঠে - কিন্তু চেক-ইন করতে গিয়ে সেই সম্ভ্রম একটু ঝাঁকি খেয়ে গেলো - জানা গেলো যে এদের ঘরে মাইক্রোওয়েভের কোনো ব্যবস্থা নেই - এমনকি এক্সট্রা চার্জেও এরা মাইক্রোওয়েভের বন্দোবস্ত করে দিতে পারবেনা, কারণ রুমের ভোল্টেজ-লাইনে নাকি মাইক্রোওয়েভ চালানো যাবেনা, ব্লা-ব্লা-ব্লাহ... অথচ আসার আগে এদেরকেই যখন ফোন করে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, তখন এক মহিলাকন্ঠ হেসে-হেসে দিব্যি বলেছিলো যে ঘরে ঘরে মাইক্রোওয়েভের ব্যবস্থা আছে!!  যাই হোক কি আর করা - তিনতলার ক্যাফেটেরিয়ার কমন মাইক্রোওয়েভেই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে - তবে আমাদের রুম ছ-তলায় হওয়ায় একটু ওঠা-নামা করতে হবে। হোটেলটা এমন কিছু আহামরি নয়, তবে রুমে ঢুকতেই দেখতে পেলাম দেওয়ালে 'Mater'-এর বেশ বড়সড় একটা sticker সাঁটকানো রয়েছে। এছাড়া সিলিংয়ের দিকে সারা দেওয়াল জুড়ে CARS-এর 'Mater & McQueen'-এর sticker রোল করে লাগানো। দেখেই তো আদি বেজায় উত্তেজিত, আর ভীষণ খুশি !
আমাদের রুম #৬০৪
আমাদের অন্য ঘরটার থীম হলো Disney-র Toy Story মুভির উপর বেস করে। সেখানকার দেওয়ালে Woody-র ছবি সাঁটাকানো। ঘরে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে, ফ্রেশ হয়ে নিয়ে আমরা রাতের খাবার খেতে বার হলাম - যাওয়া ঠিক হলো 'Chesecake Factory'-তে। এই প্রথম আমার Chesecake Factory-তে খেতে আসা। আলো-আঁধারির দোচলায় পড়ে, কিম্বা খাবারে Cheese-এর আধিক্যের জন্যেই অল্প খাবারেই পেট দম মেরে গেলো। খাওয়া সেরে আমরা কিছু bottled water আর দুধ কেনার জন্যে এখানকার Target-এ গেলাম। সেখান থেকে বাজার সেরে ফেরার পথেই দেখতে পেলাম রাতের আকাশে আলোর রোশনাই - অর্থাৎ ডিসনীল্যান্ড পার্কে সেরাতের 'ফায়ারওয়ার্কস' শুরু হয়ে গেছে। বাজির আলোর ফোয়ারাতে রাতের আকাশ ঝলমল করে উঠেছে। পরের দিনই আমাদের ডিসনীল্যান্ড পার্কে যাবার কথা - ভাবতেই মন আনন্দে নেচে উঠলো। জিনিষপত্র গাড়ির পিছনে রেখে আমরা তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। এখন আমাদের হোটেলে ফিরে জিনিসপত্র গোছগাছ করে শুয়ে পড়তে হবে, যাতে কাল সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডী হতে পারি। বেড়ানো শুরু হয়ে গেছে - countdown already started !!! 

DAY-1 (Disneyland Park) - Aug 17, 2015 - সোমবার
প্রত্যেকটা বাঙালি ফ্যামিলির কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ঠ থাকে - এই যেমন  আমাদের ফ্যামিলিতে খুব ছোটোবেলা থেকেই দেখে এসেছি যে কোনো বিষয়েই প্রচুর ভাবনা-চিন্তা করে প্ল্যান করা হয়, কিন্তু কাজের বেলায় দেখা যায় যে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকেই নজর দিতে আমরা বেমালুম ভুলে গেছি ! 

গতরাতে ঘুম খুব একটা ভালো হয়নি - কারণ একে তো অচেনা জায়গা, তার উপর বিছানাটার দু'ধার ফাঁকা। দুটো বিছানার একটাতে আমি, আর অন্যটাতে আদি আর দেবযানী শুয়েছিলো। কিন্তু আদি ঘুমের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, তাই ওর বিছানার দিকে মাঝেমাঝেই আমাকে নজর রাখতে হচ্ছিলো। ভোরের দিকে ঘুম এলেও স্বপ্নে দেখলাম CARS-এর Mater আমার দিকে চেয়ে কি'সব বলে যেন খ্যাঁক-খ্যাঁক করে হেসে চলেছে ! সকাল আটটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে আমরা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। তিনতলার মাইক্রোওয়েভ থেকে গরম করে আনা দুধ খাওয়া সেরে, আদিও ব্যাকপ্যাক পরে রেডি হয়ে গেলো। গতরাতের খাবার খেয়ে আমার পেট দম মেরে ছিলো, তাই এদিন ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে দিলাম। হোটেল থেকে বেরিয়ে একটুখানি হেঁটে আমরা যখন ডিসনীল্যান্ডে টিকিট কেটে ঢুকলাম তখন ঘড়িতে দেখলাম সাড়ে দশটা বেজে গেছে। সোমবার হলেও ডিসনীল্যান্ড আজ লোকে লোকারণ্য ! ঢুকেই Main Street-এর সামনে ডিসনী রেল স্টেশনের সামনে আমরা পোজ মেরে ছবি তুলে নিলাম। 

হোটেল থেকে বার হবার মুখেই টের পাওয়া গেলো যে আমরা আদির সানগ্লাস আনতেই ভুলে গেছি ! অথচ বাড়িতে ওর তিন-তিনটে ভালো সানগ্লাস আছে ! Main Street-এর পথে ডিসনী মুভির নানান পপুলার ক্যারেক্টাররা দাঁড়িয়ে আছে, বাচ্চাদের সাথে ফটো তোলার জন্যে - অবশ্য তাদের প্রতিটির সামনেই বিশাল লাইন। এরকম একটা লাইনে তিতির আর তিরাই দাঁড়িয়ে পড়লো 'মিনি মাউস'-এর সাথে ছবি তোলার জন্যে, আর সেই ফাঁকে আমরা চললাম আদির জন্যে একটা সানগ্লাস কিনতে। দেখা গেলো সানগ্লাসের মতো কমদামী, বা অতি সাধারণ জিনিষ এখানকার বেশিরভাগ দোকানেই থাকে না। বেশ কয়েকটা স্টোর ঘোরার পর অবশেষে একটা বড়ো দোকানে বাচ্চাদের সানগ্লাসের খোঁজ মিললো। প্রায় তিনগুন বেশি দাম দিয়ে একই রকম সানগ্লাস কিনে যখন বেরিয়ে এলাম তখনও বাকিদের 'মিনি'-র সাথে ফটো তোলার চান্স আসেনি। সুতরাং ঠিক হলো আমি আর ইন্দ্র গিয়ে 'ফ্যান্টাসমিক শো'-র ফাস্ট-পাস কালেক্ট করে নিয়ে আসবো, বাকিরা সেই সময়ে ফটো তোলা শেষ হয়ে গেলে মেন স্ট্রীটের ট্রেন রাইডটা সেরে নেবে। সেই মতো আমরা দ্রুত ভীড়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চললাম 'Big Thunder Trail'-এর দিকে, সেখানেই ফাস্ট-পাস বিলি করার কথা। মিনিট দশেক হাঁটার পর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছালাম, তখন দেখলাম বুদ্ধুর মতো আমরা টিকিটগুলোই সঙ্গে করে আনিনি!! টিকিট ছাড়া আবার ফাস্ট-পাস দেবে না - দেওয়া উচিতও নয়! সুতরাং আবার আমরা পেন্ডুলামের মতো ফিরে চললাম টিকিটগুলো নিয়ে আসার জন্যে। ভাগ্য ভালো ছিলো, কারণ তখনও ফাস্ট-পাস ফুরিয়ে যায় নি। অবশেষে ফাস্ট-পাস কালেক্ট করে আমরা ফিরে গিয়ে ট্রেন স্টেশনের সামনে গিয়ে বাকিদের জন্যে ওয়েট করতে লাগলাম। এরপর সবাই মিলে আমরা চললাম রয়াল থিয়েটারের বিখ্যাত FROZEN মিউজিক্যাল শো দেখতে। 
The Royal Theater presents FROZEN

এখানে লাইন একদম ফাঁকা ছিলো, তাই আমরা বেশ তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লাম - পরে অবশ্য বোঝা গেলো যে আসল কারণটা কি। বেশিরভাগ লোকজনই এটার ফাস্ট-পাস কালেক্ট করে রেখেছিলো, তাই তারা শো শুরুর ঠিক আগে এসে হাজির হলো। অবশেষে সবার শেষে আমাদের, অর্থাৎ যাদের ফাস্ট-পাস নেই, তাদের ডাক পড়লো। যদিও আমরা সবাই বসার জায়গা পেলাম, কিন্তু একসাথে বসা আর হলো না। এরপর আমরা চললাম Mark Twain Riverboat-এ রাইড নিতে। 
Mark Twain Riverboat Ride 
এটা একটা বেশ বড়স সেলিং বোট - তাই লাইন বড়ো থাকলেও কোনো অসুবিধা হলো না। আদি এই প্রথম কোনো বোটে চড়লো। বেশ রিলাক্সিং এই রাইডটি। মিনিট তিরিশের এই রাইডে Rivers of America-র Tom Sawyer অ্যাইল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়। 



যাবার পথে নেটিভ রেড-ইন্ডিয়ানদের জীবনযাত্রা, সুদূর অ্যাইল্যান্ডে বাস করা নানান রকমের বন্য জীবজন্তুদের সাথে যাত্রীদের পরিচয় ঘটে। 



চ ল ছে  - চ ল বে . . . ]



No comments:

Post a Comment